ফের যান্ত্রিক ত্রুটি শাহজালাল সার কারখানায়


প্রকাশিত: ০৩:৪৬ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে নির্মাণাধীন শাহজালাল সার কারখানায় ফের যান্ত্রিক ক্রটি দেখা দিয়েছে। শনিবার রাতে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কিছুক্ষণ পরই বন্ধ হয়ে যায়। পরে ত্রুটি সারিয়ে দ্রুতই পুরোদমে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শাহজালাল সার কারখানার ব্যবস্থাপক প্রকৌশল কাজী রুহুল আমিন বলেন, শনিবার রাতে উৎপাদন শুরু করা হয়েছিল। তখন ছোটখাটো কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। এগুলো সারানোর চেষ্টা চলছে। আশা করছি রোববার রাতের যে কোনো এক সময় পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করতে পারবো।

তিনি আরো বলেন, উৎপাদন শুরুর সময় ছোটখাটো ত্রুটি সব কারখনায়ই ধরা পড়ে। এটা তেমন কোনো সমস্যা নয়।

এর আগে আরেকদফা যন্ত্রিক ত্রুটির কারণে আটকে যায় ফেঞ্চুগঞ্জে শাহজালাল সার কারখানার উৎপাদন। আগস্ট মাসের প্রথম দিকে নবনির্মিত এই কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর কথা ছিল। সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ায় দেশের সর্ববৃহৎ এই সার কারখানায় এখনো পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে কারখানার মিথেন এটরকুলারে এ ত্রুটি ধরা পড়লে পিছিয়ে যায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন।

শাহজালাল সার কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, শনিবার রাতে কিছু ক্যাজুয়াল প্রোডাকশন হয়েছে। মূলত রোববার রাত থেকে পুরোদমে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সোমবার যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ৫৪০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে এশিয়ার বৃহতম শাহজালাল সার কারখানাটি নির্মাণ করা হয়। আর এই কারখানা নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচিত হয় এই কারখানা নির্মাণে দুর্নীতির বিষয়টি। দুর্নীতি তদন্তে ফেঞ্চুগঞ্জে প্রতিনিধি প্রেরণেরও সিদ্ধান্ত নেয় সংসদীয় কমিটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৪ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহজালাল সার কারখানা নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, `শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি` স্থাপনের জন্য ২০১২ বছরের শুরুতে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ১৫০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। এর আগে চীন এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মাণাধীন শাহজালাল সার কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে ঢাকায় একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনা সরকার এবং চীনের এক্সিম ব্যাংক প্রকল্প ব্যয়ের ৭০ শতাংশ (তিন হাজার নয়শত ছিয়াশি কোটি টাকা) ঋণ সহায়তা প্রদান করে। ঋণের বার্ষিক সুদের হার দুই শতাংশ ধরা হয়েছে। ২০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্প ব্যয়ের অবশিষ্ট এক হাজার চারশত তেইশ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার তার নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দিচ্ছে।

ফেঞ্চুগঞ্জ শাহজালাল সার কারখানাটি চীন এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মিত হলেও এর প্রযুক্তিগত কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাপান, আমেরিকা এবং নেদারল্যান্ড।

সার কারখানাটি চালু হলে প্রতিদিন ১৭৬০ মেট্রিক টন করে বছরে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হবে এবং প্রতিদিন এক হাজার মেট্রিক টন হিসাবে বছরে তিন লাখ ৩০ হাজার টন অ্যামনিয়া উৎপাদিত হবে।

শাহজালাল সারকারখানা সূত্রে জানা যায়, ৩৮ মাসব্যাপি প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয় চলতি আগস্টে। আগস্টেই পূর্ণ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে নির্মাণ বিলম্বের কারণে পিছিয়েছে উৎপাদন।

এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক কামরুজ্জামান বলেন, হরতালসহ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈরি আবহাওয়ার কারণে নির্মাণ কাজ কিছুটা পিছিয়েছে।

ছামির মাহমুদ/এআরএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।