ভারতে পেঁয়াজের রফতানি মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব বেনাপোলে

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক বেনাপোল (যশোর)
প্রকাশিত: ০৭:১০ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ভারতীয় কৃষিপণ্য মূল্য নির্ধারণকারী সংস্থা 'ন্যাপেড' হঠাৎ করেই শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) পেঁয়াজের রফতানিমূল্য বাড়িয়ে ৮৫২ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছে। যার তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলে।

এতদিন ভারত থেকে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ ৩০০ থেকে ৪১০ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হলেও এখন থেকে তা ৮৫২ মার্কিন ডলারে আমদানি করতে হবে। সে জন্য আগের এলসিগুলো সংশোধন করে ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে।

নতুন মূল্যে প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি খরচ পড়ছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। আর পাইকারি বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা দরে। এরপর খুচরা বাজারে সেই পেঁয়াজে ৫৭ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দুয়েক ট্রাক পেঁয়াজ এলেও সেগুলো আগের এলসির পেঁয়াজ।

এদিকে ভারত সরকার পেঁয়াজের রফতানিমূল্য বাড়িয়ে দেয়ায় দেশের খোলাবাজারে পেঁয়াজের দাম তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা। ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৪১০ মার্কিন ডলারে। সে সময় কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। ভারতের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজ সংকট দেখা দেয়ায় বাংলাদেশে পেঁয়াজের রফতানি বন্ধ করতেই মূল্য দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে দাবি করছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা।

অপরদিকে বাংলদেশি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পেঁয়াজ মৌসুমে প্রতিবারই ভারত এ কাজ করে। শুধু পেঁয়াজ না প্রতিটি খাদ্যদ্রব্যে তারা এমন কাজ করে।

বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মা স্বরসতী এজেন্সির স্বত্বাধিকারী বাপ্পা মজুমদার জানান, বন্যার কারণে গত এক মাসের ব্যবধানে ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। পেঁয়াজ রফতানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তখন ভারতের বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পায়। এখন মূল্য সহনশীল রাখতেই ভারত সরকারের কৃষিপণ্য মূল্য নির্ধারণকারী সংস্থা 'ন্যাপেড পেঁয়াজের রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি আরও জানান, গত ১৩ সেপ্টেম্বর দিল্লি থেকে পেট্রাপোল কাস্টমসে পাঠানো ফ্যাক্স বার্তায় বিষয়টি জানানো হয়। তাতে বলা হয়, 'এখন থেকে পেঁয়াজের কোনো চালান দেশের বাইরে রফতানি করতে হলে বর্তমানে নির্ধারণ করা ৮৫৫ মার্কিন ডলারে কার্যকর হবে।' আগের কোনো এলসি থাকলে সেগুলোও সংশোধন করতে হবে।

Benapole-Onion-2

বেনাপোল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক খুলনার হামিদ এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে প্রতি মেট্রিক টন ৮৫৫ ডলার মূল্যে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) ১২২ মে.টন পেঁয়াজ আমদানি করি। সেখানে (ভারত) বন্যার কারণে পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে। আগে পেঁয়াজ আমদানি হতো নর্থসাউথ থেকে। বন্যার কারণে এখন আমদানি হচ্ছে সাউথ (দক্ষিণ) থেকে। পরিবহন খরচ ও ক্রয়মূল্য বেশি পড়ায় সেখানে দাম বেড়েছে। বেনাপোল বন্দর পর্যন্ত পেঁয়াজের আমদানি খরচ পড়ছে প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। খুলনায় পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা দরে। পেঁয়াজের চাহিদা থাকায় তারা বেশি মূল্য দিয়েও আমদানি করছেন।

স্থানীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রয়েল এন্টারপ্রাইজের মালিক রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করতেই ভারত সরকার কৌশল হিসেবে রফতানি মূল্য দ্বিগুণ করেছে। এমন চলতে থাকলে দেশে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে। তবে ভারত সরকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলে বাজার আবার আগের জায়গায় ফিরে আসবে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে এক হাজার ১১৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। মূল্য বৃদ্ধির পর আমদানি কিছুটা কমেছে। তবে বাংলাদেশি অনেক আমদানিকারকের এলসি ভারতের রফতানীকারকদের কাছে পড়ে আছে। অনেকে মূল্য সংশোধন করে বাড়তি দামে পেঁয়াজ আমদানি করছেন।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অনেকটাই কমেছে। বাজার সহনশীল রাখতে ও পেঁয়াজের আমদানি গতিশীল করতে কাস্টমস হাউজ ২৪ ঘণ্টা খোলা আছে। পেঁয়াজের কোনো শুল্ক না থাকায় আমদানিকারকরা যে মূল্য ঘোষণা দিচ্ছেন আমরা সে মূল্যেই শুল্কায়ন করে দিচ্ছি।

মো. জামাল হোসেন/এমএমজেড/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।