লেখক হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন সমরেশ মজুমদার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ০৩:৪৩ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সিলেটে ‘বই প্রকাশের গল্প’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে নিজের লেখক হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন কালজয়ী উপন্যাসিক ও দুই বাংলায় জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। শুক্রবার দুপুরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সমরেশ মজুমদারের লেখক হয়ে ওঠার গল্প মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনেন সিলেটের তিন শতাধিক ভক্ত ও লেখক এবং শিক্ষাবিদ।

সমরেশ মজুমদার বলেন, কলকাতার দেশ পত্রিকায় আমার প্রথম একটি গল্প ‘অন্তর আত্মা’ ছাপানোর জন্য দিয়েছিলাম। প্রথমে বলল এক সপ্তাহ পর ছাপা হবে এর পর খোঁজ নিয়ে জানা গেল এক মাস পর ছাপা হবে। প্রায় দেড় মাস পর গল্পটি ফেরত দেয় দেশ পত্রিকা। এরপর কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে পত্রিকাটির সাহিত্য সম্পাদককে গল্প না ছাপানোর কারণ জানতে চাই। তখন ওরা বলল গল্পটি ছাপাখানায় পাঠানোর বদলে ভুল করে আপনার ঠিকানায় ফেরত গেছে। রেখে যান এক সপ্তাহ পর এটি ছাপা হবে। পরে কথা মতো গল্পটি ছাপা হয় এবং ১৪ টাকা মাইনে পাই। এরপর গল্পটি পাঠক মহলে সমাদৃত হলে দেশ পত্রিকা পরে নিয়মিত আমার গল্প ছাপাতে শুরু করে। এভাবেই একজন সমরেশ মজুমদার লেখক হয়ে উঠি।

ইতিহাস চেতনার পাশাপাশি সমাজ ও জীবন বাস্তবতার অনন্য মিশেলে বাংলা সাহিত্যকে উপহার দেয়া এই কথা সাহিত্যিক সৃজনশীল বইয়ের বিপণী বিতান বাতিঘরের আমন্ত্রণে এই প্রথম সিলেট সফরে আসলেন। ওপার বাংলার নন্দিত এই লেখক এবার মুখোমুখি হলেন সিলেটের লেখক-পাঠকদের। গল্পের সুরে, হাস্যরসে শোনালেন তার জীবন-বাস্তবতা এবং তার সৃষ্ট সাহিত্যকর্মসহ বিভিন্ন বিষয়ের কথা।

Frog

ঘন্টাব্যাপী বক্তব্যে নিজের শুরুর বিষয়ে সমরেশ মজুমদার জানান, মঞ্চনাটকের প্রতি তার খুব টান ছিল। প্রথম গল্পও লেখেন যে নাট্যদলটির সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন সেই দলের একটি চিত্রনাট্য রচনার জন্য। যার নাম ছিলো ‘অন্তর আত্মা’। কিন্তু সেটি নিয়ে মঞ্চদলটি নাটক করায় সেটি ছাপানোর জন্য দেশ পত্রিকায় পাঠান তিনি। ছাপেনি তারাও। পরে এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে দেশ পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক বিমল করের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গল্পটি ছাপান। গল্প ছাপানোর ফলে পত্রিকা থেকে তাকে ১৫ টাকা সম্মানি দেয়া হয়। সেই টাকা তিনি বন্ধুদের নিয়ে কফি খেয়ে উড়িয়ে দেন। এরপর এই খাওয়ার লোভে বন্ধুরা তাকে আরও লিখার জন্য তাগিদ দেন। সেই কফি খাওয়া ও খাওয়ানোর লোভ থেকেই সাহিত্যিক হিসেবে পদার্পণ করেন সমরেশ মজুমদার।

লেখক ও বাউল গবেষক সাংবাদিক সুমনকুমার দাশের পরিচালনায় বক্তব্য শেষে উপস্থিত লেখক-পাঠকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন সমরেশ মজুমদার।

উঠে আসে ‘সাতকাহনে’র দীপাবলির কথাও। বলেন, আমার বাড়ির পাশে বারো বছরের একটি মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের দিন সকালে সে আমার হাত ধরে বলেছিল, কাকু, আমাকে বাঁচাও। অনেক চেষ্টা করেও সেদিন মেয়েটির বিয়ে ঠেকাতে পারিনি। তবে বিয়ের আটদিন পর বিধবা হয়ে মেয়েটি ফিরে এসে আমাকে বলেছিল, কাকু, আমি বেঁচে গেলাম। এখান থেকেই দীপাবলি চরিত্রটি তৈরি হয়।

Frog

তিনি বলেন, আমরা পুরুষরা মেয়েদের ওপর নির্ভরশীল জীবনযাপন করি। কিন্তু দীপাবলি ধরণের মেয়ে না। কোনো পুরুষই তাকে স্ত্রী হিসেবে চান না। আর মেয়েরা তাকে জীবনের আদর্শ মনে করে। এটাই এ চরিত্রের সার্থকতা।

দীর্ঘ এই আলাপচারিতায় বারবারই উঠে আসে তার উপন্যাস-ত্রয়ী ‘উত্তরাধিকার’, ‘কালবেলা’ ও ‘কালপুরুষ’ প্রসঙ্গ। উপন্যাস-ত্রয়ী নিয়ে সমরেশ মজুমদার বললেন, এই তিনটির মধ্যে প্রথম দুটি অনেকটা জোর করে লেখা। মন থেকে লেখেননি। বলা যেতে পারে, বাধ্য হয়েই লিখেছেন। ‘উত্তরাধিকার’ প্রকাশের পরে পাঠকদের আগ্রহের পরে প্রকাশক সাগরময় ঘোষের নির্দেশে বাকি দুই পর্ব লেখা হয়।

অনুষ্ঠানে আরও কথা বলেন জনপ্রিয় লেখক বাদল সৈয়দ। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ।

ছামির মাহমুদ/আরএআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।