গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূর সঙ্গে ধর্ষকের বিয়ে দিলো পুলিশ
এক গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের পর অভিযুক্ত এক ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়েছে। মামলা না নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যস্থতায় থানায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে পুলিশ। পাবনা সদর থানায় গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
গৃহবধূর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের সাহাপুর যশোদল গ্রামে ওই নারী স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। ২৯ আগস্ট রাতে একই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেল আহমেদ চার সহযোগীকে নিয়ে ওই নারীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সেখানে গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা।
গৃহবধূ কৌশলে পালিয়ে স্বজনদের বিষয়টি জানালে ৫ সেপ্টেম্বর পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে গৃহবধূ বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে রাসেলকে আটক করে পুলিশ। তবে বিষয়টি মামলা হিসেবে এজাহারভুক্ত না করে স্থানীয় একটি চক্রের মধ্যস্থতায় স্বামীকে তালাক দিয়ে ধর্ষক রাসেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ঘটনার নিষ্পত্তির চেষ্টা করে পুলিশ।
গৃহবধূর বাবা জানান, আমার মেয়ে অপহৃত হওয়ার কয়েকদিন পর তাকে খুঁজে পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার কাছে ঘটনার বিস্তারিত শুনে থানায় অভিযোগ দেই। পুলিশ আমাদের অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে মেয়েকে থানা হেফাজতে রেখে আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। পরে জানতে পারি থানায় রাসেলের সঙ্গে তার বিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বামী সন্তান থাকা অবস্থায় রাসেলের সঙ্গে তাকে কীভাবে বিয়ে দেয়া সম্ভব তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ ঘটনায় আমরা সামাজিকভাবে অপদস্থ হয়েছি। আমরা ধর্ষণের বিচার চাই।
দাপুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দৌলত আলী বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে রাসেলকে আটক করে নিয়ে যান সদর থানার এসআই একরামুল হক। পরে শুনি থানায় তাদের বিয়ে হয়েছে। এ বিয়ে কোনোভাবেই শরিয়তসম্মত নয়।
এলাকাবাসী জানান, স্বামী ও তিন সন্তান থাকা অবস্থায় কি করে একই সময়ে তালাক ও বিয়ে দিল পুলিশ। পাঁচজন ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও একজনের সঙ্গে কীভাবে বিয়ে হলো? ধর্ষণের ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই আমরা।
এ বিষয়ে নির্যাতিত গৃহবধূ বলেন, রাসেলকে আটক করে আনার পর ওসি নিজেই থানায় কাজি ডেকে এনে আমাদের বিয়ে দিয়েছেন।
অভিযুক্ত রাসেল আহমেদ বলেন, আমি ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত নই, আমাকে পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে আটক করে মামলা ও রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। থানায় আমাদের বিয়ের সময় এসআই একরাম আমাদের ছবিও তুলে রেখেছেন।
এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট কামরুন্নাহার জলি বলেন, ধর্ষণের বিচার না করে, ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেয়া সামাজিক মীমাংসার নামে প্রহসন। থানায় এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি উভয়ের সম্মতিতেও এ বিয়ে হয়, তবুও তা ধর্ষককে উৎসাহিত করার সামিল। যদি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে এর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল হক বলেন, গৃহবধূ প্রথমে ধর্ষণের অভিযোগ দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন। ওই দিন রাতে তাদের বিয়ের কথা শুনেছি। থানায় কোনো বিয়ের ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ এর সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
এ বিষয়ে পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, থানায় বিয়ের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এএম/জেআইএম