ঘুষ না দেয়ায় গৃহবধূকে গণধর্ষণ, তদন্তে পিবিআই

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০৫:৫০ পিএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

যশোরের শার্শা উপজেলায় নিজ ঘরে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূর মামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

শুক্রবার মামলার যাবতীয় নথি ও কাগজপত্র হাতে পেয়ে ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছেন পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা। এর আগে মামলায় চার আসামির মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

আটক না হওয়া একমাত্র আসামিকে নিয়ে ধূম্রজাল রয়েছে। গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূর দাবি, প্রধান আসামি এসআই খায়রুল। কিন্তু আসামি শনাক্তের সময় চিনতে না পারার কথা বলায় এ নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়।

অবশ্য শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের গৃহবধূ বলেন, ভয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে স্থানীয় গোড়পাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই খায়রুলের নাম প্রকাশ করতে পারিনি আমি। মূল আসামি এসআই খায়রুল।

তবে প্রথমে আসামি শনাক্ত করতে না পারায় অজ্ঞাত আসামি শনাক্ত করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশের পক্ষে। এজন্য প্রধান আসামি শনাক্তে ডিএনএ টেস্টের উদ্যোগ নিয়েছেন পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা। এ বিষয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

পিবিআই যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মামলার কাগজপত্র হাতে পেয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। অপরাধী শনাক্তে ডিএনএ টেস্টসহ যা যা করণীয় সবই করা হবে।

জানা যায়, ২ সেপ্টেম্বর শার্শা উপজেলার লক্ষ্মণপুর এলাকায় ওই গৃহবধূর বাড়িতে গভীর রাতে যান এসআই খায়রুল, সোর্স কামরুলসহ চারজন। তারা ওই গৃহবধূর কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ না দেয়ায় এসআই খায়রুল ও কামরুল গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন

৩ সেপ্টেম্বর শার্শা থানায় তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত একজনের নামে মামলা করেন গৃহবধূ। মামলাটি বৃহস্পতিবার পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব পায় যশোর পিবিআই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে পরিদর্শক শেখ মোনায়েম হোসেনকে। দায়িত্ব পেয়েই শুক্রবার গৃহবধূর বাড়ি পরিদর্শন ও জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন মোনায়েম হোসেন।

তদন্ত কর্মকর্তা শেখ মোনায়েম হোসেন বলেন, ভিকটিমের ‘সোয়াপ কালেকশন’ করে ডিএনএ প্রোফাইলের জন্য সিআইডি হেড কোয়ার্টারে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে ডাক্তারি পরীক্ষায় পাওয়া ধর্ষণের আলামতের সঙ্গে গ্রেফতার তিনজনের ডিএনএ টেস্ট করাতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

প্রধান অভিযুক্ত এসআই খায়রুল আলম প্রসঙ্গে শেখ মোনায়েম হোসেন বলেন, এটি তদন্তের বিষয়। তদন্তে কারও যদি সম্পৃক্ততা থাকে, তাহলে পরবর্তীতে বিষয়টি জানানো হবে।

এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর সকালে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে গৃহবধূ যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে এলে বিষয়টি জানাজানি হয়। ওই দিন রাতেই শার্শা থানায় মামলা করেন গৃহবধূ। মামলায় এসআই খায়রুলের নাম উল্লেখ ছাড়া আসামি করা হয় কামরুজ্জামান ওরফে কামরুল, লক্ষ্মণপুর এলাকার আব্দুল লতিফ, আব্দুল কাদের ও এক অজ্ঞাত আসামি। শুক্রবার সকালে ওই গৃহবধূ সাংবাদিকদের বলেন, ভয়ে সেদিন রাতে এসআই খায়রুলের নাম বলতে পারিনি।

এদিকে, ধর্ষণের ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধী) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন শিকদারকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ।

যশোরের পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, তদন্ত কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা বলা আছে। সেই হিসেবে রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে তদন্ত কমিটি। তদন্তে প্রমাণিত হলে এসআই খায়রুলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ বলেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তবে সেখানে কার কার সিমেন (বীর্য) রয়েছে তা জানতে ডিএনএ টেস্ট প্রয়োজন।

মিলন রহমান/এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।