স্কুল মাঠে কোরবানির স্থান, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা


প্রকাশিত: ০৭:১৮ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আসন্ন ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির জন্য নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে স্থান নির্ধারণ করে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক)। আর তালিকায় ৯টি স্কুলের মাঠও রয়েঠে। এ কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে ওই সব স্কুলের শিক্ষার্থীরা।

পশু জবাইয়ের জন্য স্কুল-কলেজের মাঠকে বেছে নেয়ায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-অভিভাবকদের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা হলে পশু জবাইয়ের স্থান পরিবর্তন করা হবে।

এদিকে, ওই সব স্কুলের শিক্ষার্থীদের আগামী ১ অক্টোবর থেকে মডেল টেস্ট শুরু হওয়ার কথা। মডেল টেস্ট শুরু হলেই ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে আসবে এবং ওই সব স্থান দিয়ে চলাফেরা করবে। মাত্র পাঁচ দিনে কোরবানির পশুর বর্জ্য সিসিক সরিয়ে ফেললেও ওই স্থান জীবাণু মুক্ত হবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কোরবানির পশুর বর্জ্য যেস্থানে ফেলা হবে, সেই স্থান একমাসেও জীবাণু মুক্ত হবেনা। ফলে এসব স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।

পাঠানটুলা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠও পশু কোরবানির স্থান হিসেবে নির্ধারণ করেছে সিটি কর্পোরেশন। ওই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা আয়েশা আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন, কোরবানির স্থান নির্ধারণ করা উদ্যোগ ভাল। তবে বিদ্যালয়ের মাঠ নির্ধারণ করা উচিত হয়নি।

তিনি আরো জানান, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে তার স্কুল খোলা হবে। ১ অক্টোবর থেকে বিদ্যালয়ের মডেল টেস্ট শুরু। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানান। স্কুল খোলার পর কোরবানির পশুর বর্জ্যে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়বে। এতে স্বাস্থ ঝুঁকি আরো বাড়বে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ও সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রশাসক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, একদিকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ রক্ষায় আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। অন্যদিকে, সিসিক পরিবেশ রক্ষায় বারবার বর্থ্যতার পরিচয় দিয়ে আসছে। স্কুলের মাঠে কোরবানির পশুর জবাই করার মতো অপরিকল্পিত এ উদ্যোগও তার একটি অংশ। আমরা আশা করব সিসিক ছেলে-মেয়েদের কথা চিন্তা করে সময় থাকতে যতাযত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

স্কুলের মাঠে কোরবানির পশু জবাই প্রসঙ্গে ডা. মমিনুল হক মুন্না জাগো নিউজকে বলেন, কোরবানির পশু বিদ্যালয়ের মাঠে জবাই করার ফলে মাঠে যে বর্জ্য পড়বে তা থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন ধরণের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন, পশুর বর্জ্য যেসব স্থানে পড়বে সেসব স্থান দিয়ে কমপক্ষে এক মাসের মধ্যে চলাফেরা করলে ডায়রিয়া, আমাশা, ক্রিমিবাহিত রোগ, চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের কথা চিন্তা করলে কর্তৃপক্ষ স্কুলের মাঠতো দূরের কথা এর আধা কিলোমিটারের মধ্যে পশু কোরবানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করতো।

তবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ওই সব স্থান পরির্বতন করা হবে।

অন্যদিকে, তালিকায় ৬নং ওয়ার্ডের পশু কোরবানির স্থান হিসেবে চৌকিদেখী আবাসিক এলাকার খেলার মাঠের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, চৌকিদেখী এলাকায় এ ধরনের কোনো মাঠই নেই।

এ ব্যাপারে ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, চৌকিদেখী আবাসিক এলাকা খেলার মাঠ বলতে আমার ওয়ার্ডে কিছু নেই। এখন কিভাবে সেটি করা হল আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা। এ ওয়ার্ডে বাসা-বাড়িতে কোরবানির পশু জবাই করার মত অনেকের জায়গা আছে।

১৬নং ওয়ার্ডের পশু কোরবানির স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- ধোপাদিঘীরপার। ধোপাদিঘীরপার কোথায় পশু জবাই করা হবে সেটির কোনো উল্লেখ নেই। এছাড়া ওই এলাকায় কোনো খেলার মাঠও নেই। এ বছর প্রথমবারের মতো ২৭ ওয়ার্ড ঈদে পশু কোরবানির জায়গা নির্ধারণের উদ্যোগ নেয় সিসিক।

পরিবেশের স্বার্থে এ উদ্যোগ নেয়া হলেও সমন্বয়হীনতার কারণে প্রথম বছরেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। ২৭ ওয়ার্ডে কোরবানির পশু জবাইয়ের নির্ধারিত অনেক জায়গার হদিসই মিলছে না। সিসিকর কাগজে-কলমে অনেক এলাকার নাম উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এসব স্থানের কোনো অস্থিত্বই নেই। সরেজমিন কয়েকটি এলাকা ঘুরে সিসিক নির্ধারিত অনেক স্থানের হদিস মিলেনি।

আবার অনেক ওয়ার্ডে পশু জবাইয়ের জন্য বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মাঠ ও বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠকে নির্ধারণ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেক কাউন্সিলরও ক্ষুব্ধ সিসিকের এমন সিদ্ধান্তে। কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র সাত দিন। সিসিক পশু কোরবানির জায়গা নির্ধারণ করলেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না নাগরিকরা। নেই কোনো প্রচার প্রচারণা।

ঈদে পশু জবাইয়ের জন্য সিসিক নির্ধারিত স্থানগুলো হচ্ছে, ১নং ওয়াডের্র আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ, ২ নং ওয়াডের্র পুরাতন মেডিকেল কলোনি মাঠ, ৩নং ওয়াডের্র মেডিকেল কলোনি মাঠ, ৪নং ওয়ার্ডের আম্বরখানা কলোনি মাঠ, ৫নং ওয়ার্ডের গোয়াইপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন জেলা পরিষদ মাঠ, ৬নং ওয়ার্ডের চৌকিদেখী আ/এ খেলার মাঠ, ৭নং ওয়ার্ডের জালালাবাদ আবাসিক এলাকার খেলার মাঠ, ৮নং ওয়ার্ডের পাঠানটুলা স্কুল সংলগ্ন খেলার মাঠ, ৯নং ওয়াডের্র বাগবাড়ি জবাইখানা, ১০নং ওয়ার্ডের ঘাসিটুলা মাঠ, ১১নং ওয়ার্ডের লালাদিঘী পশ্চিমপার সংলগ্ন মাঠ, ১২নং ওয়াডের্র শেখঘাট পিছের মূখ মাঠ, ১৩নং ওয়াডের্র কাজির বাজার মাদ্রাসা মাঠ, ১৪ নং ওয়ার্ডের ছড়ারপার মাঠ, ১৫নং ওয়ার্ডের মিরাবাজার স্কুল সংলগ্ন মাঠ, ১৬নং ওয়ার্ডের ধোপাদিঘীর উত্তরপার, ১৭নং ওয়ার্ডের কাজি জালাল উদ্দিন স্কুল সংলগ্ন মাঠ, ১৮নং ওয়ার্ডের রায়নগর স্কুল মাঠ, ১৯নং ওয়ার্ডের সোনারপাড়া স্কুল মাঠ, ২০নং ওয়ার্ডের এমসি কলেজ মাঠ, ২১নং ওয়ার্ডের লামাপাড়া স্কুল মাঠ, ২২নং ওয়ার্ডের শাহজালাল উপশহর খেলার মাঠ, ২৩নং ওয়ার্ডের মাছিমপুর স্কুল সংলগ্ন মাঠ, ২৫নং ওয়ার্ডের বারোখলা জাহাজ বিল্ডিং সংলগ্ন মাঠ, ২৬নং ওয়ার্ডের কদমতলী স্কুল সংলগ্ন মাঠ ও ২৭নং ওয়ার্ডের গোটাটিকর স্কুল সংলগ্ন মাঠ।

তালিকার অধিকাংশ এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ নতুবা বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার মাঠকে। ৯নং ওয়ার্ডের পশু জবাই করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে বাগবাড়ি জবাইখানা। পাশাপাশি ৮নং ওয়ার্ডের নাগরিকদের জন্য ৯নং ওয়ার্ডে অবস্থিত পাঠানটুলা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন খেলার মাঠ উল্লেখ করা হয়েছে। এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বিদ্যালয়ের মাঠ ছাড়া আশপাশে কোনো মাঠ নেই।

ওই এলাকার বাসিন্দা ও টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ইরফানুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমার জানা মতে বিদ্যালয়ের মাঠ ছাড়া আশপাশে কোনো মাঠ নেই। বিদ্যালয়ে পশু কোরবানি হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরুপ প্রভাব পড়বে।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোখলিছুর রহমান কামরান বলেন, তার এলাকায় জবাইখানা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু পাঠানটুলা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠ নির্ধারণের কোনো তথ্য তার জানা নেই। আর এটি কিভাবে করা হয়েছে সেটিও তার জানা নেই বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান লোদী কয়েস বলেন, তার ওয়ার্ডের যে এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি পর্যাপ্ত নয়। অনেকের বাসা-বাড়ি ওই এলাকা থেকে অনেক দূরে। গরু জবাই করার পর মাংস নিয়ে বাড়ি ফেরা কোরবানি দাতাদের জন্য একটি কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দেখা দেবে।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজ বলেন, এই প্রথম এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে কিছুটা ভুল ক্রটি থাকবেই। এটি যাতে বাস্তবায়ন করা হয় সেজন্য তারা প্রচার চালাচ্ছেন। আজ থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে।

ছামির মাহমুদ/এআরএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।