শার্শায় গৃহবধূ গণধর্ষণের মামলা পিবিআইতে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০৮:৫৮ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

যশোরের শার্শার লক্ষণপুরে গৃহবধূ গণধর্ষণের মামলাটির তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) প্রদান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পুলিশ হেড কোয়ার্টারের এক আদেশে পিবিআইকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়।

জানতে চাইলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার পুলিশ হেড কোয়ার্টারের এক আদেশে পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর মোনায়েম হোসেন বলেছেন, দায়িত্ব পেয়েই ঘটনাস্থলে চলে এসেছি। অর্থাৎ তদন্ত শুরু করেছি।

এদিকে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ ভয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে স্থানীয় গোড়পাড়া ফাঁড়ির এসআই খায়রুলের নাম প্রকাশ করতে পারেননি বলে দাবি করেছেন। শুক্রবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন। তিনি এখন এসআই খায়রুলসহ সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

শুক্রবার নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের ওই গৃহবধূ বলেন, আমি খায়রুলকে ভালোভাবেই চিনি। আমাদের কাছ থেকে দফায় দফায় ৮ ও ৪ হাজার করে টাকা নিয়েছে। আবার বিনা কারণে আমার স্বামীরে ধরে নিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, পুলিশ যখন খায়রুলকে আমার সামনে নিয়ে আসছিল এবং জিজ্ঞেস করছিল- ইনি ছিলেন কিনা। তখন আমি ভাবলাম, সে তো পুলিশের লোক। যখন সে বারেবারে আমার স্বামীরে তুলে নিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে আমি পারবো না। তাছাড়া খায়রুল আমার দিকে এমনভাবে তাকাইছে, তার চোখের ভাষায় আমি বুঝতি পারছি।

ধর্ষণের সময় এসআই খায়রুল উপস্থিত ছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিপোর্টে তো প্রমাণ আসবে। আর আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তারা বলবে। কারণ তারা আরও ভালো জানে।

এসআই খায়রুলসহ আরও যে তিন আসামি রয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে ওই গৃহবধূ বলেন, তাদের শাস্তি দেখে আরও ৫/১০ জন মানুষ যেন এমন অপকর্ম করতে সাহস না করে।

এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বের যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাউদ্দিন শিকাদার এক ‘প্রেস নোটে’ দাবি করেছিলেন, এসআই খায়রুল আলমকে ওই গৃহবধূর সামনে উপস্থিত করা হলে তিনি শনাক্ত করেননি। সেজন্য তার নাম বাদ দিয়ে মামলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শার্শা থানা পুলিশের ওসি এম মশিউর রহমান বলেন, ওই গৃহবধূ সেদিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনেই এসআই খায়রুল সম্পর্কে তার বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাকে কোনো প্রকার ভয়ভীতি বা চাপ দেয়া হয়নি। তবে আজ কেন ভয়ের কথা বলছেন এ প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, হয়তো কেউ তাকে দিয়ে এখন এসব বলাচ্ছে।

এদিকে, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী ও ফোরামের জেলা নেতারা ওই নারীর বাড়িতে যান। তারা ওই গৃহবধূর খোঁজখবর নেন এবং আইনগত সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন। পরে নিপুণ রায় বলেন, এসআই খায়রুলসহ চারজনের নাম এসেছে। ভয়ভীতি দেখিয়ে এসআইকে মামলায় এজাহারভূক্ত করা হয়নি।

বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে এসআই খায়রুলকে এক নম্বর আসামি করে তাকে গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

প্রসঙ্গত, ২ সেপ্টেম্বর শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর এলাকায় ওই গৃহবধূর বাড়িতে গভীররাতে যায় এসআই খায়রুল ও সোর্স কামরুলসহ চারজন। তারা ওই গৃহবধূর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে এসআই খায়রুল ও কামরুল তাকে ধর্ষণ করেন বলে ওই গৃহবধূ অভিযোগ করেন।

৩ সেপ্টেম্বর সকালে ওই গৃহবধূ যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে এলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। ওইদিন রাতেই শার্শা থানায় একটি মামলা করেন গৃহবধূ। মামলায় এসআই খায়রুলের নাম রাখা হয়নি। আসামি করা হয় কামরুজ্জামান ওরফে কামরুল, লক্ষণপুর এলাকার আবদুল লতিফ এবং আবদুল কাদেরকে এবং একজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এ ঘটনা তদন্তে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানিয়েছিলেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তবে, সেখানে কার কার সিমেন (বীর্য) রয়েছে তা জানতে ডিএনএ টেস্ট প্রয়োজন।

মিলন রহমান/এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।