চেয়ারম্যানের মাছের পেটে দেড়শ কৃষকের ধানগাছ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নড়াইল
প্রকাশিত: ১১:১৯ এএম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নড়াইলের কালিয়ায় সরকারি টাকায় নির্মিত রাস্তা ঘেরা কদমতলা বিলে ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমিতে কৌশলে ঘের বানিয়ে মাছ চাষ করছেন পেড়লী ইউপি চেয়ারম্যান জারজিদ মোল্লা। এতে ৫০ একর জমির আমন ধান মাছ খেয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, দুটি হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি অত্যন্ত প্রভাবশালী ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করাতো দূরের কথা, ভয়ে কেউ মুখও খুলতে সাহস পান না। ক্ষতিগ্রস্তরা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা আইছেন দেহে যান, কতা বললি আমাদের জান থাকপে নানে’।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার পেড়লি ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জারজিদ মোল্লা গত তিন মাস আগে এলজিএসপি এবং কর্মসৃজনের ৩টি প্রকল্পের আওতায় কদমতলা রমজান মেম্বরের বাড়ি থেকে আশরাফ মাওলানার বাড়ি আবার সেখান থেকে কদমতলা বিল অভিমুখী এবং কদমতলা হিন্দু পাড়ার ডোব থেকে চর জামরিলডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করেন। উৎপাদিত ফসল আনা-নেয়া, সেচ সুবিধা ও যাতায়াতের সুব্যবস্থার কথা বলে কৃষকদের জমির ওপর দিয়ে ওই রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এ সময় রাস্তার একই পাশে দেড় কিলোমিটার জুড়ে লম্বা খাল তৈরি করেন তিনি।

কিন্তু প্রায় দেড় মাস আগে ওই খালে বৃষ্টির পানি জমায় চেয়ারম্যান সেখানে প্রায় দেড়শ মণ গ্রাসকার্প জাতীয় মাছের বড় পোনা ছাড়েন এবং দেখাশোনার জন্য কর্মী নিয়োগ দেন। অপরদিকে রাস্তা দিয়ে ঘেরা জমিতে আমন ধান লাগান কৃষকরা। ধান গাছ বেড়ে ওঠার সঙ্গে মাছও বেড়ে ওঠতে থাকে।

Narail

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অভিযোগ করেন, বর্ষায় পানি বেড়ে যাওয়ায় খালের মাছ পার্শ্ববর্তী প্রায় দেড়শ কৃষকের ৫০ একর ফসলি জমিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং আমন ধানগাছ খেয়ে ফেলে।

জানা গেছে, এখানকার ৭৫ ভাগ জমিই খেটে খাওয়া সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের। নতুন এই রাস্তা নির্মাণের ফলে বিলের এসব জমির পানি বের হতে পারছে না। সেই সুযোগে চেয়ারম্যান খালে মাছ ছেড়েছেন। কিন্তু এলাকার মানুষ এনিয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না, বরং কেউ যাতে বাঁধা দিতে না পারে সেজন্য এ জলাশয়ে লোক দিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সম্প্রতি স্থানীয় এক ব্যক্তি সেখান থেকে একটি মাছ ধরলে চেয়ারম্যানের লোকেরা তাকে মারধরের চেষ্টা করলে চেয়ারম্যানের কাছে মাপ চেয়ে নিজেকে রক্ষা করেন তিনি।

সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায় চেয়ারম্যানের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। ক্ষতিগ্রস্তরা শুধু বলেছেন, ‘আইছেন, দেহে যান। চিয়ারমেনের সাথে কতা বলেন। তার বিরুদ্ধে কতা বললি আমাগে জান থাকপে নানে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ইউপি মেম্বর জানান, চেয়ারম্যান উদ্যেশ্যমূলক ভাবে বিলের মধ্যে রাস্তা নির্মাণের নামে ঘের কেটেছেন। এ নিয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছে না।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক বলেন, এখানে আনুমানিক ১শ বিঘা জমির ধান মাছে খেয়ে ফেলেছে। এরমধ্যে তার পৈতৃক প্রায় ৪ বিভাগ জমিও আছে। চেয়ারম্যান আমাদের ডেকে কিছু শোনেনি বা বলেনি। সে তার তার ইচ্ছা মতো এখানে মাছের চাষ করছে।

জানা গেছে, চেয়ারম্যান জারজিদ মোল্যা পেড়লি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বদরুল ইসলাম এবং কদমতলা গ্রামের শুকুর হত্যা, গত দু’তিন বছর আগে নড়াইলে দু’ সাংবাদিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী মামলার আসামি।

ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মুখ খুলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

অপরদিকে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জারজিদ মোল্যা জানান, কদমতলার ডোব এলাকায় ১০-১২ বিঘা জমির আমন ধানের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য কৃষকদের ডেকে বলেছি ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেব। মাছ উঠে গেলে তারা এখানে ইরির ব্লক করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, এ রাস্তা করতে ১০ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। সরকার থেকে পেয়েছি ৩ লাখ টাকার মতো। বাকি টাকা নিজের থেকে খরচ হয়েছে। কৃষকদের সম্মতিক্রমে এবং ভালোর জন্য এ রাস্তা করা হয়েছে। কালিয়া থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে কিছু জানি না এবং কেউ কোনো অভিযোগও দেয়নি।

কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হুদা বলেন, এ ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই। তবে কেউ যদি অভিযোগ করে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হাফিজুল নিলু/এমএমজেড/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।