ঠোঁট দুটো নড়ালেনও না মিন্নি
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টা! বরগুনার কারাগার প্রাঙ্গণে সংবাদকর্মীদের ভিড়! সঙ্গে আছেন উৎসুক জনতা। কোনো প্রকার অপ্রিতীকর ঘটনা এড়াতে কারাগারের সামনে আছেন পুলিশ সদস্যরাও। এতকিছু যার জন্য সেই মিন্নি যেন কারাগার থেকে বের হবেন এখনই। তাই সবাই প্রস্তুত। সংবাদকর্মীরা প্রস্তুত মিন্নির ছবি নেয়ার জন্য। স্বজনরা প্রস্তুত মিন্নিকে গ্রহণ করার জন্য। আর উৎসুক জনতা সুবিধামতো জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন মিন্নিকে এক নজর দেখার জন্য।
মঙ্গলবার বিকেলে সকল প্রক্রিয়া শেষে কারাগার থেকে জামিনে বের হবেন মিন্নি, এমন খবর জানা ছিল দুপুরেই। তবে বিকেল ঠিক কয়টায় মিন্নি জামিনে বের হবেন, এটা নিশ্চতভাবে জানতেন না কেউ। তাই বিকেল তিনটার আগ থেকেই বরগুনার কারাগার প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেন সাংবাদকর্মীরা।
ঘড়ির কাটায় ঠিক ৪টা ৩৩ মিনিট হতেই খোলা হয় বরগুনা জেলা কারাগারের প্রধান গেট। এই গেট দিয়ে প্রথমে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর ও তার হাত ধরে সাদা পেশাক পরিহিত অবস্থায় বের হন আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। বের হয়েই এদিক ওদিক তাকান মিন্নি। মিন্নি বের হতেই কাছে এগিয়ে যান তার চাচা আবু সালেহ। দু’হাতে মিন্নিকে আগলে ধরেন তিনি। মিন্নির কাছে যান একমাত্র ভাই ক্বাফি, মামা সুজন মোল্লাসহ তার আইনজীবীরা। কিন্তু স্বজনদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি মিন্নি। আদর করেননি একমাত্র ভাইটিকেও।
আগে থেকেই কারাগারের সামনে অপেক্ষমান ছিল একটি অ্যাম্বুলেন্স। আস্তে আস্তে হেঁটে সোজা সেই অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন মিন্নি। ততক্ষণে কথা বলাতো দূরের কথা, একবারের জন্যও দু’ঠোঁট ফাঁকাও করেননি মিন্নি। জামিন আদেশে গণমাধ্যমে কথা বলা নিষেধ মিন্নির। তাই গণমাধ্যমকর্মীরাও তার কাছে জানতে চাননি কিছু।
কারাগার থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ আগে কারাগার প্রাঙ্গণেই মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর অনুভূতি জানাতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। আমি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মিন্নিকে এ মামালা থেকে মুক্ত করবো।
তিনি আরও বলেন, আমি আমার জামাই হত্যার বিচার চাই। আমার প্রত্যাশা মিন্নি আসামি থেকে এ মামলার ফের সাক্ষী হবে। আমার জামাইটা নেই। মিন্নির এমনিতেই মন খারাপ। মিন্নি যেন ওর স্বামী হত্যার বিচার পায়। এ সময় মিন্নির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সবার কাছে দোয়া চান তিনি।
কারাগার প্রাঙ্গণে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমার ভালো লাগাটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মিন্নিকে জামিনে মুক্ত করার জন্য আমি সর্বপ্রথম আইনি লড়াই শুরু করেছিলাম। উচ্চ আদালতে যখন মিন্নির জামিনের শুনানি হয়েছে তখন আমি সেই আদালতে উপস্থিত ছিলাম। উচ্চ আদালতের জামিন আদেশ বরগুনার কারাগারে আসার পর বরগুনার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নির বন্ড দাখিলও করেছি। সব শেষে মিন্নি কারামুক্ত হওয়ায় আমার অনেক ভালো লাগছে। আমার খুব ভালো লাগছে। আমার এই ভালো লাগা আমি কাউকে বোঝাতে পারবো না।
এফএ/জেআইএম