আসামি থেকে সাক্ষী হবে মিন্নি, আশা বাবার
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
প্রকাশিত: ১০:১০ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
নানা নাটকীয়তা ও দীর্ঘ ৪৮ দিন পর অবশেষে কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন বহুল আলোচিত রিফাত হত্যা মামলার সাক্ষী থেকে আসামি বনে যাওয়া আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। সব আইনি প্রক্রিয়া ও দাফতরিক কাজ শেষে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কারাগার থেকে মুক্তি পান মিন্নি।
বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বরগুনা জেলা কারাগারে পৌঁছায় জামিন আদেশ। এরপর বিকেল ৪টা ৩৩ মিনিটে কারাগার থেকে বের হন মিন্নি।
সকালে উচ্চ আদালতের দেয়া মিন্নির জামিনসংক্রান্ত রায়ের অনুলিপি বরগুনায় পৌঁছায়। মিন্নির আইনজীবী দুপুর ১টার দিকে বরগুনার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে উচ্চ আদালতের রায়ের আদেশসহ একটি বিবিধ মামলা করেন। আদালতের আইনি প্রক্রিয়া শেষে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে আদালতের বিচারক এম জাহিদ হাসান জামিন আদেশে সই করেন। এরপর আদালতের বার্তাবাহক দিয়ে তাৎক্ষণিক জামিন আদেশ বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়। এ সময় মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন, ছোট ভাই মো. কাফীসহ আত্মীয়-স্বজনেরা কারা ফটকের সামনে অপেক্ষমান ছিলেন।
বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেনকে কারাগারের অভ্যন্তরে ডেকে পাঠান কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে সাড়ে ৪টার দিকে মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে আসেন মোজাম্মেল হোসেন। বাবার সঙ্গে কারা ফটক থেকে বের হয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন মিন্নি। সেখানে থেকে তিনি বাড়ি চলে যান।
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমি আজ খুব খুশি, খুব আনন্দিত। মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। আমি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিন্নিকে এ মামলা থেকে মুক্ত করব।
তিনি বলেন, একটি প্রভাবশালী মহল এ হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করছে। খুনে অভিযুক্তদের শাস্তি থেকে বাঁচানোর জন্য মিন্নিকে প্রধান এবং একমাত্র সাক্ষী থেকে আসামি করেছে।
মিন্নির বাবা আরও বলেন, আমি মেয়ের জামাইয়ের হত্যার বিচার চাই। আমার প্রত্যাশা মিন্নি আসামি থেকে এ মামলায় আবার সাক্ষী হবে। আমার মেয়ের জামাই নেই, মিন্নির এমনিতেই মন খারাপ। মিন্নি যেন স্বামী হত্যার বিচার পায়।
গত ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পর দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়।
গত ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
পর দিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানায়।
তার আগের দিনই পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘মিন্নি হত্যাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নির যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। রিফাত হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে মিন্নি।
মিন্নি পরে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে। মিন্নির বাবা অভিযোগ করে আসছেন, ‘নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’ মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও তার দাবি।
বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর গত ৫ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।
রিফাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত ২ জুলাই এ মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
মিরাজ/এএম/এমএস