চাচাতো বোনকে বিয়ে, বিচ্ছেদ ঘটাতে বাবার মামলায় ছেলে কারাগারে
চার বছর আগে প্রেম করে চাচাতো বোন রিমা খাতুনকে (২৪) বিয়ে করেন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সাব্দারপুর গ্রামের আনিচুর রহমান (৩০)। তিন বছরের ছেলে আরমান হোসেনকে নিয়ে মাটির ঘরে বাস করলেও বেশ সুখেই ছিলেন তারা।
কিন্তু এই বিয়ে ও তাদের সংসার মেনে নিতে পারেনি আনিচের পরিবার। রিমাকে তালাক দেয়ার জন্য ভাইরা তার উপর চাপ দিতে থাকেন। একবার হাতুড়িপেটাও করেন। তা সত্ত্বেও রিমার কাছ থেকে তাকে আলাদা করা যায়নি।
শেষমেষ গত বুধবার এই দম্পতির বসত ঘর ভেঙে দেয় তারা। এর আগে সকালে বাবার করা এক মামলায় আনিচকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে, আর স্ত্রী রিমা নিজের বাবা রুহুল আমিনের বাড়িতে রাত কাটাচ্ছেন।
প্রতিবেশীরা জানান, রুহুল আমিন আর মফিজ উদ্দিন সম্পর্কে দুই ভাই। একটি জমি নিয়ে তাদের বিরোধ ছিল। এই বিরোধ চলাকালে তাদের ছেলে-মেয়ে নিজেদের পছন্দে বিয়ে করে। পরে মেয়ের পরিবার সেই বিয়ে মেনে নিলেও ছেলের পরিবার এখনও মানতে পারেনি।
রিমা খাতুন জানান, চার বছর আগে তিনি আনিচকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। আনিচ তখন মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ছিল। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর পরিবার নানাভাবে তাদের দু’জনকে আলাদা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, আনিচরা চার ভাই। প্রথমদিকে তারা আমাদের বাড়ি উঠতে দেয়নি। এক পর্যায়ে দুই ভাই আনিচকে হাতুড়ি ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। মাথায় ছয়টা সেলাই দিতে হয়েছিল। এ ঘটনায় ভাইদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করেন আনিচ। এরপর তাদের নামেও পাল্টা মামলা হয়। উভয় পক্ষের মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারধীন আছে।
রিম বলেন, বাবার করা মামলায় আনিচের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে এটা তারা বুঝতে পারেননি। গত বুধবার সকালে হঠাৎ করে পুলিশ এসে বাড়ি থেকে আনিচকে ধরে নিয়ে যায়। এর কিচ্ছুক্ষণ পর শুরু হয় বাড়ি ভাঙচুর।
রিমা জানান, তাকে স্বামীর ভিটা থেকে তাড়ানোর জন্য এই ভাঙচুর করা হয়েছে। এখন তিনি একমাত্র সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে আনিচের বাবা মফিজ উদ্দিন বলেন, ওই ছেলে আমাদের কথা শোনে না। ভাইরা মেরেছে বলে তাদের নামে মামলা দিয়েছে। যে কারণে তিনিও ছেলের (আনিচ) নামে মামলা দিয়েছেন। তবে, আনিচের বসত ঘর ভাঙচুরের বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি।
বড় ভাই বাবুল হোসেন জানান, আনিচ প্রেম করে বিয়ে করেছে- এটা তার ব্যাপার। তবে সে খুবই খারাপ। যে কারণে একবার মারপিট করেছিলাম। কিন্তু এখনও সে ভালো হয়নি।
আর ঘর ভাঙচুরের বিষয়ে তিনি বলেন, একটা ঘরে তাদের মেঝ ভাই থাকত। সেটা সে ভেঙে নিয়েছে। আর যে ঘরে আনিচ থাকে সেটা তার স্ত্রী রিমা নিজেই ভেঙে এখন অন্যের দোষ দিচ্ছে।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এমএমজেড/পিআর