এমন তো কথা ছিল না!
শান্তিনগর সেতু ঘিরে এখন অশান্তি শুরু হয়েছে। কথা ছিল সেতুটি ১১ মাসে শেষ হবে। কিন্তু ২৩ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও চলছে নির্মাণ কাজ।
ঈশ্বরদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চল লক্ষ্মীকুন্ডার চরকুড়লিয়াবাসীর অনেকদিনের আশা ছিল শান্তিনগর সেতুর উপর দিয়ে তারা নদী পারাপার হবে। কিন্তু পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ সেতুর কাজের সময়কাল ১১ মাস থাকলেও গত ২৩ মাসেও তা শেষ হয়নি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার খেয়ালখুশি মতো কাজ করায় নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। কবে নাগাদ এ সেতুর কাজ শেষ হবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তাই এবারও চলতি বর্ষা মৌসুমে নৌকা ও কলাগাছের ভেলা দিয়ে নদী পারাপার হতে হচ্ছে চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষকে।
২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এমপি পদ্মার শাখা নদীর উপর শান্তিনগর সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়নে সেতুর নির্মাণ কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে পেয়েছে নাটোরের মীর হাবিবুল আলম অ্যান্ড মীর শরিফুল আলম জেবি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নির্মাণ কাজ করছেন পাবনা জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শরীফ উদ্দিন প্রধানের ভাই ফিরোজ প্রধান।
উদ্বোধনের পর মাত্র ২০ থেকে ২৫ দিন সেতুর পাইলিং কাজ করার পর একটানা দু'মাস কাজ বন্ধ ছিল। ২০১৮ সালের ২৬ মে থেকে ফের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ঢিমেতালে কাজ করতে করতে পার হয়েছে ২৩ মাস। তবে ঈদুল আযহার আগে থেকে এখন পর্যন্ত কাজ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, শিগগির কাজ শুরু হবে এবং একটানা কাজ করে নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এ সেতুর নির্মাণকাল ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ থেকে ১ আগস্ট ২০১৮। অথচ নির্মাণ কাজ নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে পাঁচ মাস পর অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরও দুই মাস কাজ বন্ধ রাখে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ বিলম্বিত করায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। এ ছাড়া সেতুর পাশে বিকল্প কোনো রাস্তা নির্মাণ না করায় শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের মানুষের চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই। আশপাশের ফসলি জমির উপর দিয়ে মানুষ যাতায়াত করছেন। এছাড়া নির্মাণ কাজের বালু নিয়ে একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করলেও ঠিকাদাররা তাতে কোনো কর্ণপাত করেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক সেলিম রেজা বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের বিলম্বের কারণে নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। ফলে এবার বর্ষা মওসুমেও এ অঞ্চলের মানুষকে কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, সেতু নির্মাণ কাজটি নিদির্ষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হলে এলাকাবাসী উপকৃত হতো। কিন্তু টিলেঢালাভাবে কাজ হওয়ার কারণে এখনও কাজ শেষ হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদার ফিরোজ প্রধান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সময়মতো কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে নির্মাণ কাজ শেষে দিকে। আগামী দুই মাসের মধ্যেই নিমাণ কাজ শেষ হবে আশা করছি।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী এনামুল কবির জানান, এ সেতুর ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ঠিকাদারকে সময়মতো বিল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি বলে কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। আশা করি দ্রুতই সেতুর কাজ শেষ হবে।
আলাউদ্দিন আহমেদ/এমএএস/এমকেএইচ