‘ডেঙ্গুতে মানুষ মরছে, নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন মেয়র’
মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম দিনাজপুর পৌরসভাকে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন অভিযোগ এনে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন কাউন্সিররা। তারা বলেছেন, আমাদের দায়িত্ব ও কাজ করতে দেয়া হলে ১০ দিনের মধ্যে দিনাজপুরবাসীকে পরিচ্ছন্ন ও যানজটমুক্ত পৌরসভা উপহার দেব। অন্যথায় আমরা চেয়ার ছেড়ে চলে যাব।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে পৌরসভার ফাতেহুল আলম দুলাল স্মৃতি মিলনায়তনে মেয়রের কর্মকাণ্ড নিয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন কাউন্সিররা। নয়জন কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে দিনাজপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. আবু তৈয়ব আলী দুলাল এ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন।
প্যানেল মেয়র আবু তৈয়ব আলী দুলাল বলেন, সারাদেশ ডেঙ্গু নিয়ে যখন তোলপাড়, সরকার ছুটি বাতিল করে ডেঙ্গু পরিস্থিতি শামাল দিচ্ছে। ডেঙ্গুতে যখন মানুষ মরছে তখন দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। তিনি এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলতে পারেন না ডেঙ্গু বা এডিস মশা কি? নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে অমান্য করছেন মেয়র।
তিনি বলেন, পৌরসভায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের নিবন্ধন প্রদানের এক কোটি ৬০ লাখ টাকার হিসাব নেই। মাস্টাররোল কর্মচারী না থাকার পরও বেতন-ভাতা উত্তোলন করা হচ্ছে। অনেক মাস্টাররোল কর্মচারী মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কাজ না করলেও বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। বন্ধের দিনেও হাজিরা দেখিয়ে বেতন-ভাতা উত্তোলন করা হয়। রোলার ভাড়ার টাকায় দুর্নীতি, ট্যাংকারের টাকার দুর্নীতি, বিলবোর্ডের টাকায় দুর্নীতি ও স্টেশনারি মালামাল ক্রয়ে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন দুর্নীতিতে পৌরসভাকে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন বর্তমান মেয়র। জন্মনিবন্ধন নিয়ে চলছে বাণিজ্য। নিবন্ধন সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না কোনো নিয়ম। ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৭০০ থেকে ৮০০ আবেদন পড়ে থাকলেও তাদের জন্মনিবন্ধন সনদ দেয়া হয়নি।
প্যানেল মেয়র আবু তৈয়ব আলী দুলাল আরও বলেন, পৌরসভার কর্মচারীদের বেতন সিট যাচাই করার পর মাস্টাররোলের বিভিন্ন বিভাগের ২৪ জন কর্মচারী চলতি জুলাই মাস থেকে বেতন-বোনাস তুলতে আসেননি। এদের মধ্যে অনেকের নাম ভৌতিকভাবে দেখিয়ে বেতন-ভাতা ও বোনাস উত্তোলন করা হতো। আবার অনেকের নাম থাকলেও কোনো কাজ না করে মাসে একদিন অফিসে এসে বেতন তুলতেন। ছুটির দিনেও মাস্টাররোলের কর্মচারীদের বেতন উত্তোলন করা হয়। অদক্ষ কর্মচারী নিয়োগ দেয়ায় প্রায় সময় পানির পাম্প, টিউবওয়েল মিস্ত্রি ও অন্যান্য যানবাহন নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অথচ পৌরসভার যানবাহন বিকল হলেও তা নিয়ে মেয়রের মাথা ব্যথা নেই। এক মাস ধরে ট্যাংকার নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। মানুষ টাকা দিয়েও বাড়ির ট্যাংক পরিষ্কার করাতে পারছেন না।
আবু তৈয়ব আলী দুলাল বলেন, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারীর প্রধান চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসাপাতাল। এখানে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বর্জ্যের স্তূপ থাকে। এগুলো পরিষ্কার করা হয় না। সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতার দাবিতে ৩২৮টি পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যখন কর্মবিরতিতে ছিলেন তখন আমরা কাউন্সিলররা উদ্যোগ নিয়েছি। দিনরাত এক করে বছরের পর বছর পড়ে থাকা ময়লার স্তূপগুলো ঈদুল আজহার আগে পরিষ্কার করে পৌরবাসীকে পরিচ্ছন্ন শহর উপহার দিয়েছি। এ সময় আমাদের সহযোগিতা করেননি মেয়র। উল্টো পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি দিয়েছেন তিনি। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুক্র-শনিবার বন্ধের দিনেও অফিস খোলা থাকার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি। ২২ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত কাউন্সিলররা ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে লিফলেট ছাপিয়ে পৌর এলাকায় বাড়ি বাড়ি বিতরণ করেছেন। তখন মেয়র নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান নওশাদ, জাহাঙ্গীর আলম, মোস্তফা কামাল মুক্তি বাবু, মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, কাজী আকবর হোসেন অরেঞ্জ, আশরাফুল আলম রমজান, সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর মাজতুরা বেগম পুতুল ও মাকসুদা পারভীন মিনা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুর্নীতির অভিযোগে দিনাজপুর পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন ১৩ কাউন্সিলর। পৌর কার্যালয়ে দিনাজপুর পৌরসভার মাসিক মিটিংয়ের শুরুতে উপস্থিত ১০ জন কাউন্সিলরের মধ্যে নয়জন কাউন্সিলর অনাস্থাকে সমর্থন জানিয়ে মিটিং বয়কট করেন।
কাউন্সিলরদের তোলা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। এর আগেও আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছিল, যা দুদকের তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এখন নতুন করে এসব অভিযোগ তোলা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।
এমদাদুল হক মিলন/এএম/এমএস