দুর্ভোগের অন্ত নেই যে ইউনিয়নে
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় শেষ উপজেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর। শ্যামনগর সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ৩৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গাবুরা ইউনিয়ন। ১৫টি গ্রাম নিয়ে বেষ্টিত এ ইউনিয়নটি দ্বীপ ইউনিয়ন নামেই বেশি পরিচিত। এ ইউনিয়নের দক্ষিণে সুন্দরবন ও পূর্বে খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন ও পশ্চিমে খোলপেটুয়া নদী।
দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরায় ৭ হাজার ৪৯১টি পরিবারের ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। তবে এসব বাসিন্দার জীবনমানে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া নেই। এলাকায় যাতায়াতের জন্য কোথাও কাচা রাস্তা আছে আবার কোথাও নেই। পাকা রাস্তার তো কোনো চিহ্নই নেই এ ইউনিয়নে। দূর্যোগ আর বৃষ্টিতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। এমনকি এখানে ইউনিয়ন পরিষদের কোনো কার্যালয়ও নেই।
গাবুরা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা জাগো নিউজকে জানান, প্রথম থেকেই চরমভাবে অবহেলিত গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ। উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ ইউনিয়ন। নদী পার হয়ে আসতে হয় এখানে। এছাড়া যাতায়াতের জন্য ভালো রাস্তা না থাকায় এমপি ও সরকারি কর্মকর্তারা এখানে আসেন না। এক কথায় এখানে কোনো উন্নয়ন নেই। জীবনমান উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপও নেই কারও।
গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দারা বলেন, দুর্ভোগের কোনো অন্ত নেই। কোনটা রেখে কোনটা বলবো। প্রধান দুর্ভোগ এলাকায় চলাচল উপযোগী কোনো রাস্তা নেই। বর্ষা মৌসুমে রাস্তা দিয়ে চলাফেরার কোনো উপায় থাকে না।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম জাগো নিউজকে জানান, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন না থাকার কারণে চাঁদনীমুখা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনের কয়েকটি কক্ষ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আমার বাবা যখন চেয়ারম্যান ছিলেন তখন গাবুরার ডুমুরিয়া এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের জন্য জোর চেষ্টা চালান। এরপর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও দরপত্র আহ্বানও শেষ হয়। ভবন নির্মাণ হবে এমন মুহূর্তে প্রাকৃতিক দূর্যোগ আইলার পর সাবেক চেয়ারম্যান লেলিন ডুমুরিয়া এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ করা যাবে না মর্মে ২০১৪ সালে সাতক্ষীরা জজ আদালতে একটি মামলা করেন। লেলিন তার বাড়ির পাশে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ করতে চান।
তিনি বলেন, সাতক্ষীরা জজ আদালত ভবন নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এ মামলার বিপক্ষে ২০১৫ সালে আমি উচ্চ আদালতে গিয়েছিলাম। উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের মামলার কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চান ও পরবর্তীতে শুনানি করবেন বলে অবহিত করেন। তবে সেই শুনানি আজও হয়নি। আদালতে মামলা থাকার কারণে গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের ভবনটি নির্মাণ আজও আটকে আছে।
ইউনিয়ন পরিষদ ভবন না থাকার দূর্ভোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, যখন যিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তখন তার সুবিধামতো স্থানকে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় তৈরি করে নেন। এতে করে চেয়ারমান পালাবদল হলেই পরিষদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আসবাবপত্র স্থানান্তরিত করতে হয়। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের সন্ধান মেলে না। এছাড়া জনগণও দিশেহারা হয়ে পড়েন।
আকরামুল ইসলাম/এফএ/এমএস