ব্যাংক থেকে কোটি টাকা তুলে ফাঁসলেন জেলারের স্ত্রী-শ্যালক

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০৯:২৬ পিএম, ২৯ আগস্ট ২০১৯
ফাইল ছবি

কয়েক লাখ অবৈধ টাকা ও কয়েক কোটি টাকার চেক-এফডিআরসহ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গ্রেফতার জেলার (বর্তমানে বরখাস্ত) সোহেল রানা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে করা মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় তার স্ত্রী হোসনে আরা পপি ও শ্যালক রাকিবুল হাসানকেও আসামি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ময়মনসিংহ দুদকের সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্রধর এ তথ্য জানিয়েছেন।

গত বছরের ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে ময়মনসিংহগামী ট্রেন থেকে নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর (স্থায়ী আমানত), ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার নগদ চেক, ১২ বোতল ফেনসিডিলসহ রেলওয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে। তিনি চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন।

জেলার সোহেল রানা গ্রেফতারের দুদিন পর তার স্ত্রী ও শ্যালক ময়মনসিংহ শাখার মার্কেন্টাইল ও প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকার এফডিআর উত্তোলন করেন। ৫০ লাখ টাকা পরিমাণে দুজনের নামে দুটি এফডিআর ছিল। পুলিশের হাতে এফডিআর থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে প্রতারণার মাধ্যমে তারা এক কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেন। এরপর ঘটনাটি দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত করা হচ্ছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এই দুজনকে এ বিষয়ে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তারা এখনও টাকার উৎস জানাতে পারেননি।

ধারণা করা হচ্ছে, ওই এক কোটি টাকা জেলার তার স্ত্রী ও শ্যালকের নামে ব্যাংকে এফডিআর করেছিলেন। জেলার গ্রেফতারের খবর পেয়েই প্রতারণার মাধ্যমে তারা টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেন। টাকার উৎস বলতে না পারায় দুজনকে মামলার আসামি করা হচ্ছে বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা সাধন চন্দ্র সূত্রধর।

জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস গ্রেফতার হওয়ার পর ভৈরব রেলওয়ে থানায় পৃথক দুটি মামলা করে পুলিশ। পরে মাদক মামলাটি পুলিশ তদন্ত করে কিশোরগঞ্জ আদালতে চার্জশিট দেয়। মানি লন্ডারিং মামলাটি ময়মনসিংহ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অফিস তদন্ত করছে। মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে গত ১০ মাসে তিনজন তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। ঘটনার পর জেলারকে কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্ত করে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। বর্তমানে জেলার সোহেল রানা কিশোরগঞ্জ কারাগারে বন্দি। তিনি একাধিকবার আদালতে জামিন চাইলেও তাকে জামিন দেননি আদালত। এমনকি উচ্চ আদালত হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে তার জামিন আবেদন নাকচ হয়েছে।

এদিকে দীর্ঘ তদন্তে জেলারের নামে বেনামে ২৬টি ব্যাংক হিসাবে আরও প্রায় ৪ কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছে দুদক। এই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে জব্দ করা হয় বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর জেলার বলেছিলেন, ৫ লাখ টাকা তার নিজের এবং বাকি টাকা তৎকালীন চট্টগ্রাম কারাগারের ডিআইজি পার্থ কুমার বণিক ও সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমারের। তখন যদিও দুজন এ কথা অস্বীকার করেছিলেন। তারপর গত দেড় মাস আগে পার্থ কুমার বণিককে ঢাকার বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার করেন দুদকের কর্মকর্তারা। এরপর মামলার তদন্তের মোড় ঘুরে যায়।

এর আগে ভৈরবের ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। তদন্তে চট্টগ্রাম কারাগারের ঘুষ-দুর্নীতিসহ কারাগারের ভেতরে মাদক ব্যবসায় ৪৮ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। তদন্ত কমিটি এই তদন্ত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করে। এরপর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে পার্থ কুমার বণিককে ঢাকায় তলব করা হয়। তখনই তিনি ৮০ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার হন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ময়মনসিংহ দুদকের সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্রধর বৃহস্পতিবার দুপুরে জাগো নিউজকে জানান, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। জেলারের স্ত্রী ও শ্যালক এফডিআরের টাকার কোনো উৎস দেখাতে পারছেন না। তারা প্রতারণার মাধ্যামে ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। এ কারণে দুজনকে মামলার আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়া জেলারের নামে বেনামে ২৬টি ব্যাংক হিসেবে থাকা প্রায় ৪ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ মামলাটি আগে দুজন তদন্ত করেছে। গত দেড় মাস আগে আমাকে মামলাটি তদন্ত করতে দেয়া হয়। সব কিছু যাচাই-বাছাই করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে মামলাটি তদন্তের কারণে আদালতে চার্জশিট দিতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

আসাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।