আতিয়া মহলে অভিযান : দুই মামলা নিষ্পত্তির আবেদন পিবিআইয়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ০৯:২২ এএম, ২৮ আগস্ট ২০১৯
ফাইল ছবি

সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় আতিয়া মহলে সেনাবাহিনীর জঙ্গিবিরোধী ১১১ ঘণ্টার কমান্ডো অভিযান ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ চলাকালে জঙ্গি আস্তানার অদূরে বোমা বিস্ফোরণ ও র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান আজাদসহ ৭ জন নিহত হওয়ার দুটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্তে কোনো আসামির নাম না থাকায় মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে মামলার কার্যক্রম নিষ্পত্তির আবেদন করেছেন তিনি।

বোমা বিস্ফোরণ ও হত্যার ঘটনায় দায়ের করা পৃথক দুটি মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে পিবিআইয়ের পরিদর্শক সৈয়দ আবুল হোসেন গত ১৪ জুলাই গোপনে মহানগর হাকিম আদালতে আলোচিত মামলা দুটি নিষ্পত্তির আবেদন করেন।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ব্যাখ্যায় বলা হয়, তদন্তকালে জানা যায় আতিয়া মহলের অদূরে রাস্তায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গি মোশারফ ও নাজিম। তারা দু’জনই মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানার অভিযানে মারা গেছে। তাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল। তবে তারা অজ্ঞাত। তাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি।

সিলেট পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আবুল হোসেন মঙ্গলবার রাতে জাগো নিউজকে জানান, আতিয়া মহলের বাইরে বোমা হামলার মূল হোতা ছিল জঙ্গি মোশারফ ও নাজিম। এই দু’জন মৌলভীবাজার থেকে এসে ওখানে হামলা চালিয়েছিল। আতিয়া মহলে অভিযানের পরপরই মৌলভীবাজারের বড়হাটাসহ দুটো এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো হয়। সেখানেই ওই হামলাকারীরা নিহত হয়।

তিনি বলেন, আতিয়া মহলে সেনা অভিযানে নিহত মর্জিনার বোন, ভাইসহ কয়েকজনকে অন্য মামলায় গ্রেফতার করে এনে এ মামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কিছুই পাওয়া যায়নি। যেহেতু চিহ্নিত দুই জঙ্গি মারা গেছে, এ কারণে কোনো আসামির নাম না থাকায় মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে মামলার কার্যক্রম নিষ্পত্তির আবেদন করেছি। তবে আদালত এখনও এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ রাত থেকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু হয়। প্রতিদিনই বাড়তে থাকে অভিযানের তীব্রতা। ২৫শে মার্চ রাত থেকে চূড়ান্ত অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযান সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফ করা হয়। ব্রিফিং শেষে যখন সাংবাদিকরা ফিরছিলেন তখন আতিয়া মহলের কাছাকাছি একটি মাদরাসার সড়কের মাথায় পরপর দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ হয়। দুটি বিস্ফোরণে নিহত হন র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, সিলেট মহানগর পুলিশের ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলাম ও চৌধুরী মোহাম্মদ আবুল কয়সরসহ ৭ জন। মারা যাওয়া অন্যরা ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী। আহত হন অর্ধশতাধিক উৎসুক জনতা।

এ ঘটনার পর আতিয়া মহলের চতুর্দিকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় রেড এলার্ট জারি করে চালানো হয় জঙ্গিবিরোধী অভিযান।

এদিকে আলোচিত এ ঘটনায় সিলেটের মোগলাবাজার থানায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করে। প্রথমে পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করলেও পরবর্তীতে ওই বছরের জুলাই মাসে পিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার ন্যস্ত করা হয়।

অপরদিকে আতিয়া মহলে অভিযানের পর মৌলভীবাজারের বড়হাটাসহ অন্য আরেকটি এলাকায় দুটি জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানের সময় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পক্ষ থেকে বলা হয় সিলেটের বোমা হামলাকারীরা মৌলভীবাজার থেকে এসে হামলা করেছে। ওই অভিযানে হামলাকারীরা মারা যায় বলে জানানো হয়।

তদন্তকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই আবুল হোসেন আতিয়া মহলে জঙ্গি হামলায় নিহত মর্জিনার বোন গ্রেফতারকৃত আর্জিনা, তার স্বামী জসিম উদ্দিন ও প্রতিবেশী হাসানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে জিজ্ঞাসাবাদকালে তাদের কাছ থেকে আলোচিত এ ঘটনা সম্পর্কে নতুন কোনো তথ্য পাননি।

ছামির মাহমুদ/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।