২ বছরে ৪ শতাধিক মামলা, ১১শ রোহিঙ্গা কারাগারে
আজ ২৫ আগস্ট। নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আশার দুই বছর পূর্ণ হলো। ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট দেশটির রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে বিদ্রোহী গ্রুপের হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তাদের বেশ কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়।
হামলাকারীদের আশ্রয় দেয়ার অজুহাতে ২৪ আগস্ট রাতে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর স্মরণকালের ভয়াবহ বর্বরতা শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী মগরা (বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা)। চলে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বিভৎস সব নির্যাতন। এতে প্রাণ রক্ষায় দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা।
মানবিকতার কারণে বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের সীমান্তপথ খুলে দিয়ে নিপীড়িত প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়। সীমান্তের দুই উপজেলার প্রায় ৮ হাজার একর পাহাড়ি বনভূমিতে আশ্রয়স্থল তৈরি করে ৩৩টি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে নতুন পুরনো প্রায় সোয়া ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে। এদের অধিকাংশই নারী-শিশু। দেয়া হচ্ছে জীবন ধারণে প্রয়োজনীয় রসদ। বাংলাদেশের এ মানবিকতা বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
কিন্তু আশ্রয়ের পাশাপাশি সব ধরনের সুযোগ পেয়ে দিন দিন উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষিয়ে তুলছে রোহিঙ্গারা। ইয়াবা পাচার, ডাকাতি চুরি ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছে জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গাদের অনেকে। এসব কারণে মানবতা দেখানো স্থানীয়দের জন্য রোহিঙ্গারা এখন বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে।
নানা অপরাধে গত দুই বছরে ৪ শতাধিকের বেশি মামলার আসামি হয়েছে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। এসব মামলায় কারাগারে গেছে প্রায় ১১শ রোহিঙ্গা। এমন পরিস্থিতিতে তড়িত প্রত্যাবাসন না হলে অনাগত দিনগুলো নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয়রা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, গত দুই বছরে রোহিঙ্গা শিবিরে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও প্রশাসনের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৪৬ রোহিঙ্গা। এদের মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৩২ জন। এছাড়া ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, চুরি, মাদক ও মানবপাচারসহ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৭১টি, যার মধ্যে মাদক মামলা ২০৮, হত্যা মামলা ৪৩ ও নারী সক্রান্ত মামলা ৩১টি। এসব মামলায় আসামি ১১০৫ রোহিঙ্গা। অপরাধের সাথে জড়িতদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
স্থানীয়রা বলছেন, দিন দিন রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা জড়িয়ে পড়ছে চুরি, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে। ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে স্থানীয়দের উপর হামলার ঘটনাও ঘটছে। গত বৃহস্পতিবার টেকনাফের হ্নীলার ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুককে গুলি করে হত্যা করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা।
উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়ে নিয়েছে। বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এদিকে দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর কারসাজিতে পরপর দুই বার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছেন স্থানীয়রা। রোহিঙ্গাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড ও সহিংস আচরণও রাড়ছে। এটি নিঃসন্দেহে ভাবনার বিষয়।
কক্সবাজারের সিভিল সোসাইটির নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, বেপরোয়া রোহিঙ্গারা বেশিরভাগ সময় স্থানীয়দের উপর আগ্রাসী হচ্ছে। কিছু এনজিওর উস্কানিতে তারা এমন আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইন কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ দমনে প্রতিনিয়িত অভিযান চলাচ্ছে র্যাব। পাশাপাশি মাদক পাচারে জড়িত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। র্যাবের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সবসময় সচেষ্ট রয়েছে র্যাব।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, প্রতিদিনই বাড়ছে রোহিঙ্গাদের মামলার সংখ্যা। হত্যা, চুরি, ডাকাতি ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেই ৪ শতাধিক মামলা হয়েছে এবং কারাগারেও আছে প্রায় ১১শ রোহিঙ্গা। নিপীড়ন দেখে বেড়ে ওঠা এতো সংখ্যক উদ্বাস্তু এক জায়গায় থাকলে অপরাধের মাত্রা বাড়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ, এমনটি উল্লেখ করেন তিনি।
সায়ীদ আলমগীর/এমএসএইচ