ছয় মাসেও সন্ধান মেলেনি পোশাক শ্রমিক লিপির
দীর্ঘ ছয় মাসেও সন্ধান মেলেনি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নিখোঁজ পোশাক শ্রমিক লিপি বেগমের (২৮)। এ ঘটনায় গত ২০ জুলাই স্বামী মনির হোসেনকে প্রধান আসামিসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে জেলা মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন নিখোঁজের ভাই মো. হাবিব খান। মামলার পরে পুলিশ তিন আসামিকে গ্রেফতার করলেও অধরাই রয়ে গেছেন প্রধান আসামি মনির হোসেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করার সময় মনির হোসেনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে লিপির। এরপর ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর ফতুল্লার এনায়েতপুরে আজিজুল ইসলামের কাজী অফিসে তাদের বিয়ে করেন তারা। লিপির পরিবার প্রথমে এই বিয়ে মেনে না নিলেও তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পরে মেনে নেয়। ২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি লিপির গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চাম্পাপুর ইউনিয়নের পাটুয়ায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসেন মনির। সেখানে তিন দিন বেড়ানো শেষে ২০১৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি লিপিকে নিয়ে যায় শ্বশুর বাড়ির লোকজন। পরে মনিরের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লিপির সঙ্গে যোগাযোগ করতো তার আত্মীয়-স্বজন। তবে গত এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে হঠাৎ করেই মনিরের মোবাইল নম্বর বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন নম্বর থেকে কল করে লিপির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও লিপির বাবার ছবি দাবি করে শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। এ অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল কাবিননামার কপি ওঠালে দেখা যায় মনির হোসেন তার নাম গোপন করে সেলিম হোসেন ব্যবহার করে বিয়ের রেজিস্ট্রি করেছে।
এরপর গত ২০ জুলাই মনির হোসেনকে প্রধান আসামিসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মো. হাবিব খান বাদী পটুয়াখালী মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। আদালত সেই মামলা আমলে নিয়ে কলাপাড়া থানার পুলিশকে এজহার গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ এজহার গ্রহণ করে মামলার সহযোগী আসামি সেলিম হোসেন (৩৯), মো. জয়নাল মিয়া (২৯) ও মো. মন্নাপ মিয়াকে (৬৬) গ্রেফতার করে। তবে অধরাই রয়ে গেছে প্রধান আসামি মনির হোসেন।
লিপির ভাই কৃষি শ্রমিক মো. হাবিব খান কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, 'মনির আমার বোনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বোনের সঙ্গে আমরা কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না আমাদের।
তিনি আরও বলেন, আমার বোন জীবিত আছে না মারা গেছে- কিছুই জানি না। আমার মৃত্যুর আগে হলেও বোনকে (লিপি) একবার দেখতে চাই।'
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলাপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শওকাত জাহান খান জানান, ইতোমধ্যে নেত্রকনা থেকে মামলার ৩ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা বর্তমানে জেল হাজতে আছে। তাদের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। তবে প্রধান আসামি পলাতক রয়েছে। ভিকটিমের এখন পর্যন্ত কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বাদী পক্ষের আইনজীবী সুজন জানান, 'গ্রেফতারকৃত আসামিদের পুলিশ রিমান্ডে ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মামলার প্রধান আসামি ধরা পড়বে, সন্ধান মিলবে ভিকটিমের।'
মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এমএমজেড/পিআর