কার স্বার্থে চার লাখ টাকার গাছ ৮০ হাজারে বিক্রি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ০৯:০৩ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০১৯

পঞ্চগড়ের বোদায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বড় বড় ৩০টি ফলদ ও বনজ গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। রোববার সকালে বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের জোতমনিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ গাছগুলো কাটার সময় অভিভাবকসহ স্থানীয়দের নজরে আসে। প্রায় পনের বছরের পুরানো গাছগুলো বিদ্যালয়ের চারপাশে সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ ছায়া দিচ্ছিল। কিন্তু সরকারি বিধি না মেনে ‘অদৃশ্য খুঁটির’ জোরে নামমাত্র মূল্যে গাছগুলো বিক্রি করে দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যালয়ের অভিভাবকসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, জোতমনিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোবারক আলী ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ চন্দ্র রায় গোপনে বিদ্যালয় মাঠের চারপাশের বড় বড় ইউক্যালিপটাস, কাঁঠাল ও বট গাছগুলো বিক্রির পরিকল্পনা করেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও উপজেলা প্রশাসনের কোনো অনুমতি না নিয়ে ‘অদৃশ্য খুঁটির’ জোরে ৩০টি গাছ মাত্র ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন তারা। প্রকৃত পক্ষে গাছগুলোর মূল্য চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা।

রোববার তমিজ উদ্দিন নামে স্থানীয় এক কাঠ ব্যবসায়ীর লোকজন গাছগুলো কাটা শুরু করলে সবার নজরে আসে। বিদ্যালয় ভবন ও মাঠের চারপাশে ছায়া দেয়া গাছগুলো বিক্রি করায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয় অভিভাবকসহ স্থানীয়দের মনে। তবে এ নিয়ে তাদের কেউ কারও বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাননি।

Panchagarh-Tree

বিদ্যালয়ের কয়েকজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গাছগুলো বিদ্যালয়ের চারপাশে ছায়া হয়ে ছিল। প্রতিটি গাছের বয়স ১৪-১৫ বছর। বড় বড় গাছগুলো বিনা কারণে বিক্রি করে তারা টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করেছে। এতগুলো গাছ বিক্রি হলো অথচ কেউ জানতেও পারল না।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের গাছ বিক্রি করতে হলে প্রথমে দাফতরিক অনুমোদন লাগে। বনবিভাগ গাছের দাম নির্ধারণের পর নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। কিন্তু ওই বিদ্যালয়ের গাছ বিক্রির প্রক্রিয়ায় এসব নিয়ম মানা হয়নি।

জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোবারক আলী বলেন, ‘গাছগুলোর কারণে আশপাশের খেতের ক্ষতি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছিল। এ জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বারের নির্দেশে গাছগুলো কাটা হয়েছে।’

Panchagarh-Tree

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়দানদীঘি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার বলেন, ‘বিদ্যালয়ের গাছগুলো তারা কাটবে বলে আমাকে জানিয়ে ছিলেন। আমি বলেছিলাম নিয়ম মেনে গাছগুলো যেন কাটা হয়। এরপর তারা কী করেছে আমার জানা নেই।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এএম শাহজাহান সিদ্দিক বলেন, ‘এ ঘটনা তদন্ত করে বোদা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ হাসানকে সোমবারের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মাহমুদ হাসান বলেন, ‘সরকারি বিধি না মেনে বিদ্যালয়ের গাছ কাটার কথা শুনেছি। আমরা গাছগুলো জব্দ করার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। গাছগুলো জব্দ করার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সফিকুল আলম/এনডিএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।