মাটিতে গড়াচ্ছে চামড়া

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ০৪:২৪ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০১৯

জয়পুরহাটে কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। জেলার বাজারগুলোতে গতবারের চেয়ে চার ভাগের এক ভাগ দামে চামড়া বেচতে হচ্ছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। অনেক জায়গায় এত কম দামে বিক্রি না হওয়ায় অবহেলায় মাটিতে পড়ে আছে চামড়া। চামড়া বাজারের এই ধসে দিশেহারা মধ্যস্বত্বভোগী ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। যেসব হতদরিদ্র মানুষ কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকা থেকে একটা অংশ পান প্রতি বছর এবার তাদের ভাগ্যেও জুটবে না কাঙ্ক্ষিত অর্থ।

জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে জেলায় বিভিন্ন বাজারে প্রতিটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৪০০-৫০০ টাকা। এবার আকারভেদে দাম ৩০-৮০ থেকে ১৫০-২০০ টাকা। প্রতিটি গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছিল এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায়। কিন্তু এবার তা ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

Joyourhat-chamra01.jpg

জয়পুরহাট সদর উপজেলার হেলকুন্ডা গ্রামের আনিছুর রহমান, কালাই উপজেলার হাতিয়র গ্রামের গোলাম রব্বানী, ক্ষেতলাল উপজেলার দাশড়া গ্রামের হানিফ হোসেনসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার কোরবানিদাতারা জানান, বিগত ১০ বছরের চামড়ার এমন মন্দা বাজার দেখেননি তারা। চামড়ার বাজার ধসের কারণে লোকসানের শিকার হলেন জেলার প্রায় সব মৌসুমি ব্যবসায়ী।

জয়পুরহাট জেলা শহরের নতুনহাট এলাকার ইদ্রিস আলী, জামালগঞ্জ বাজারের মতিউর রহমানসহ মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির চামড়ার এই আকস্মিক দরপতনে দিশেহারা মধ্যস্বত্বভোগী চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা প্রতি বছর কোরবানির সময় দু-একদিনের এ ব্যবসায় টাকা খাটিয়ে ভালো লাভ করেন। তবে এবারের দরপতনে লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে বিপাকে তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক ফড়িয়া জানান, সীমান্তে কড়াকড়ি না থাকলে তারা ওপারে চামড়া পাঠিয়ে কিছু লাভের মুখ দেখতেন। এবার সেটিও হচ্ছে না।

Joyourhat-chamra01.jpg

পুঁজি সংকট, ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পাওনা ইত্যাদি কারণে চামড়ার দাম পড়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা। জয়পুরহাট শহরের চামড়া ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন ও সরদার নবাব বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পাওনা লাখ লাখ টাকা। হাতে টাকা না থাকায় তারা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ চামড়া কিনতে পারছেন না। ফলে বাজারে চাহিদা কম থাকায় চামড়ার মূল্য স্বাভাবিক কারণে কমে গেছে।

অন্যদিকে চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে। এতে দেশের স্থানীয় বাজারে আপাতত চামড়া কেনাবেচা করতে হচ্ছে। ফলে চাহিদা খানিকটা কম হওয়ায় দরপতন ঘটছে বলে দাবি কয়েকজন ব্যবসায়ীর।

Joyourhat-chamra01.jpg

জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল রাশেদ মোহাম্মদ আনিসুল হক জানান, জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনে সীমান্তে এলাকা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২২ কিলোমিটার এলাকা তার কাঁটায় ঘেরা, বাকি ১৮ কিলোমিটার সীমান্তে তার কাঁটা নেই। চোরাকারবারিরা মূলত এই জায়গাটিকেই তাদের পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে। এ জায়গাগুলো সব সময় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। চামড়া পাচার রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা।

চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে হলে রফতানি বাড়ানোর পাশাপাশি চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের সহজ শর্তে ঋণ সুবিধার দাবি জানিয়েছেন এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

রাশেদুজ্জামান/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।