স্ত্রীকে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিলেন স্বামী

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক শ্রীপুর (গাজীপুর)
প্রকাশিত: ০৩:১৫ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০১৯

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আসপাডা মোড় এলাকায় মঙ্গলবার রাতে ঘরের ড্রেসিং টেবিলের ভেতর থেকে পলিথিনে মোড়ানো সুমি আক্তারের (২৩) খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে মঙ্গলবার গভীর রাতে ঢাকার সাভার থেকে সুমির স্বামী মামুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শ্রীপুর থানা পুলিশের ওসি মো. লিয়াকত আলী বলেন, মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে সাভার এলাকার ফুপাতো ভাইয়ের বাসা থেকে মামুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন জানিয়েছে দাম্পত্য কলহের জেরেই মূলত সুমিকে খুন করা হয়েছে। প্রায় দেড় বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। এটি ছিল উভয়ের দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকে উভয়ের মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। সম্প্রতি নারীঘটিত বিষয় নিয়ে স্বামী মামুনের প্রতি সুমির চরম অবিশ্বাস দেখা দেয়। এ নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। এর জেরেই বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সুমিকে খুনের পর তার জমানো ৩০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় মামুন।

শ্রীপুর থানা পুলিশের এসআই রাজীব কুমার সাহা বলেন, সুমি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার দেবকান্দা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে। শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা এলাকার সাবলাইম গ্রিনটেক নামের পোশাক কারখানার অপারেটর ছিলেন সুমি। স্বামী মো. মামুনের (৩৫) সঙ্গে আসপাডা মোড় এলাকায় নাইম উদ্দিনের বাড়ি ভাড়া থাকতেন তিনি। স্বামী ওই এলাকায় ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করেন।

বৃহস্পতিবার রাতে বাসায় কৌশলে সুমিকে রুটি-হালুয়ার সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয় মামুন। পরে সুমি নিস্তেজ হয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে শ্বাসরোধে সুমিকে হত্যা করে মামুন। পরে তার মরদেহ গোসলখানায় নিয়ে যায় এবং বাজার থেকে কিনে আনা ধারালো ছুরি দিয়ে প্রথমে মাথা, হাত-পা বিচ্ছিন্ন করা হয়।

পরে শরীরের বিভিন্ন অংশের মাংস খণ্ড করে ১০ কেজি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন পলিথিনে ভরে বসত ঘরের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দেয়। তার দেহের অবশিষ্ট অংশ একটি বড় ব্যাগের ভেতরে রাখা হয়। এরপর গভীর রাতে সুযোগ বুঝে ব্যাগটি কাপাসিয়ার সিংহশ্রী এলাকায় শীতলক্ষ্যার শাখা বানার নদীতে ফেলে দেয় মামুন। শুক্রবার রাতে মামুন তার শাশুড়িকে মোবাইলে জানায় সুমিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। সুমি বাড়িতে পৌঁছেছে কি-না শাশুড়ির কাছে জানতে চায় মামুন।

মামুন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে এসব কথা স্বীকার করেছে। দাম্পত্য জীবনে চরম অসন্তোষ থেকে এমন খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে মামুন। এ ব্যাপারে সুমির বাবা নিজাম উদ্দিন বাদী হয়ে মামুনকে আসামি করে মঙ্গলবার বিকেলে শ্রীপুর থানায় মামলা করেছেন।

নিহতের ছোট বোন বৃষ্টি একই কারখানায় চাকরি করেন। বৃষ্টি একই এলাকায় অন্য বাসায় ভাড়া থাকেন। বৃহস্পতিবার বেতন দিয়ে কারখানায় ঈদের ছুটি হয়ে যায়। শুক্রবার তাদের একসঙ্গে বাড়ি যাওয়ার কথা। সুমি কারখানা থেকে ঈদ বোনাস ও বেতনসহ ৩০ হাজার টাকা পেয়েছেন।

ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য ওই টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার সকালে বাড়ি যাওয়ার সময় সুমির মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করেও না পেয়ে বৃষ্টি ও তার স্বামী নবী হোসেন গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তারা বাড়ি পৌঁছে একাধিকবার বড় বোন ও ভগ্নিপতির মোবাইলে যোগাযোগ করে ফোন নম্বর বন্ধ পান।

শনিবার বৃষ্টি ও তার স্বামী আসপাডা মোড় এলাকায় বোনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানে কাউকে না পেয়ে ঘরের দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। বাসায় কাউকে না পেয়ে ফিরে যান তারা। ফেরার পথে আসপাড়া মোড় এলাকায় মামুনের সন্ধান পান এবং তাকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দেন তারা।

একপর্যায়ে মামুন তাদের বাসায় যেতে বলে কৌশলে পালিয়ে যায়। এরপর বৃষ্টি ও তার স্বামী গ্রামের বাড়ি ফিরে যান। বাড়ি গিয়ে বোনকে না পেয়ে আবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু বোন-ভগ্নিপতির সন্ধান পাননি বৃষ্টি। ঈদের দিন সোমবার বিকেলে স্বামীকে নিয়ে বৃষ্টি আবার আসপাডা মোড় এলাকায় সুমির ভাড়া বাসায় যান এবং ঘরের ভেতরে ঢোকেন। একপর্যায়ে ঘরে থাকা ড্রেসিং টেবিলের নিচ থেকে মেঝেতে রক্তাক্ত পানি গড়াতে দেখতে পান তারা। সেই সঙ্গে ঘরের ভেতর দুর্গন্ধ ছড়ায়।

এ অবস্থায় সোমবার রাত ৮টার দিকে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে চার পলিথিনে মোড়ানো মানবদেহের পাঁচটি টুকরা দেখতে পান তারা। তবে সেখানে তার মাথা, হাত-পা ছিল না। বিষয়টি তারা শ্রীপুর থানা পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে পেয়ে সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে খণ্ডিত টুকরাগুলো উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, পলিথিনে থাকা খণ্ডিত মাংস মানুষের। এতে মানুষের চামড়া ও নারী দেহের খণ্ডিত মাংস বলে আলামত পাওয়া গেছে। তবে সেখানে মাথা, হাত-পা ছিল না।

এসআই রাজীব জানান, সুমির লাশের বাকি অংশগুলো উদ্ধারে বানার নদীতে তল্লাশি চলছে। এখন পর্যন্ত সুমির খণ্ডিত অংশগুলো পাওয়া যায়নি।

শিহাব খান/এএম/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।