ঢুকছে ভারতীয় গরু, শঙ্কায় খামারিরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফেনী
প্রকাশিত: ১২:২৪ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০১৯

সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু ঢুকছে ফেনীতে। জেলায় দেশি গরুর পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও ভারতীয় গরুর এমন অনুপ্রবেশে দাম নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন স্থানীয় খামারিরা।

জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদফতর তেকে জানানো হয়েছে এবার ফেনীতে লক্ষাধিক কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় খামারিদের কাছে মজুদ রয়েছে ৮৮ হাজারেরও বেশি পশু। যা দিয়ে এলাকার কোরবানির পশুর ৯০ শতাংশ চাহিদা পূরণকরা সম্ভব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৪ হাজার ২২২ জন খামারি মোট ৮৮ হাজার ১৯৬টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে ২৩ হাজার ৩০৮টি ষাঁড়, ৩৯ হাজার ২৭২টি বলদ, ৯ হাজার ৪৬টি গাভী, ৪ হাজার ৯০টি মহিষ, ১০ হাজার ২০৭টি ছাগল, ২ হাজার ২০৩টি ভেড়া ও ৭০টি অন্যান্য প্রজাতির পশু রয়েছে।

জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপতরের তথ্য মতে এবার ফেনী সদরে ২১ হাজার ৪০৮টি, ছাগলনাইয়ায় ১১ হাজার ৯২০টি, দাগনভূঞায় ২৪ হাজার ৭৫২টি, সোনাগাজীতে সাড়ে ১৬ হাজার, পরশুরামে ৮ হাজার ৪৩১টি ও ফুলগাজীতে ৫ হাজার ১৮৫টি পশু খামারে মোটাতাজা করা হয়েছে। যা দিয়ে ফেনীর কোরবানির পশুর চাহিদার সিংসভাগ পুরণ করা সম্ভব।

সূত্র আরও জানায়, গত বছর ঈদুল আজহায় জেলায় ৯৭ হাজার ৯৫৬টি পশু কোরবানি করা হয়েছিল।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক খামারি জানান, ঈদ ঘনিয়ে এলে সীমান্ত এলাকার ভারতীয় কাঁটাতারের ফাঁক গলিয়ে আসতে থাকে ভারতীয় গরু। একাধিক চক্র প্রভাবখাটিয়ে ভারত সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বিপুল সংখ্যক গরু নিয়ে আসেন। রুগ্ন ও অপুষ্ট এসব গরু বাজারে কম মূল্যে বিক্রি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হন দেশীয় খামারিরা।

তারা আরও বলেন, খামারিরা রাসায়নিকমুক্ত খাবার খাইয়ে শংকর ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল, সিন্ধি, হরিয়ানা ও দেশী জাতের পর্যাপ্ত গরু মোটাতাজা করেছে।

এদিকে ঈদের মাত্র দুই দিন থাকলেও ফেনীর পশুরহাটগুলোতে বেচা-বিক্রি এখনও জমে উঠেনি। ফেনী সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, ফেনী সদর উপজেলার পাঁছগাছিয়া বাজার, লস্করহাট বাজার, সোনাগাজী মোহাম্মদ সাবের সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠসহ বেশ কয়েকটি পশুরহাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দেশি গরুর পাশাপাশি বিদেশি গরুর আধিক্য। স্থানীয় খামারিদের অভিযোগ, বাজারে কম দামে বিদেশি গরু পাওয়ায় দেশি গরুর উপযুক্ত দাম মিলছে না। ফলে তারা শঙ্কার মধ্যে আছেন।

FENI-2.jpg

জেলার সবচেয়ে বড় খামারি পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার বলেন, তার খামারে তিনশতাধিক গরু লালন-পালন করা হয়েছে। প্রতিটি গরুর পেছনে কাঁচা ও শুকনো খড়, ভুষিসহ দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। আশাকরি খামারের সবগুলো গরু বিক্রি হয়ে যাবে।

এদিকে ফেনীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাচালান প্রতিরোধে সর্তক রয়েছে প্রশাসন। সীমান্তবর্তী উপজেলা ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরামে বিজিবি সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছে। এছাড়াও সীমান্তে টহল বাড়িয়েছে তারা।

৪ বিজিবির পরিচালক (অধিনায়ক) লে. কর্ণেল নাহিদুজ্জামান জানান, বিগত কয়েক মাসে ফেনীর বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের সময় প্রচুর ভারতীয় গরু ও মোটাতাজাকরণের বিপুল পরিমাণ ওষুধ জব্দ করা হয়েছে।

অপরদিকে জেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার ডা. মো. আনিসুর রহমান জানিয়েছেন জেলার ৫০টি পশুরহাটে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাদের নেতৃত্ব ৫ সদস্যের টিম হাটগুলোতে গিয়ে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ খামারি ও বেপারীদের দিক নির্দেশা দিচ্ছেন।

এছাড়া ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) খোন্দকার নুরুন্নবী জানিয়েছেন পরশুরহাটসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে ছিনতাই চাঁদাবাজি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।

তিনি বলেন, কোরবানির পশু বেচাকেনার পর মানুষ যাতে নিবিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে সেদিকে নজর রাখছে পুলিশ।

রাশেদুল হাসান/এমএমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।