সেদিন রাতে থানায় কি ঘটেছিল বিস্তারিত বর্ণনা দিলেন গৃহবধূ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক খুলনা
প্রকাশিত: ০৭:৪৬ পিএম, ০৮ আগস্ট ২০১৯

খুলনা জিআরপি থানায় গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশের দুটি তদন্ত কমিটির সদস্যরা। বৃহস্পতিবার জেলগেটে তার বক্তব্য শোনা হয়। এ সময় ঘটনার দিন রাতে থানায় তার সঙ্গে যা ঘটেছিল তদন্ত কমিটিকে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন গৃহবধূ।

একই সঙ্গে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাদের খবর পাঠিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। পুলিশের দুটি তদন্ত কমিটি ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এর আগে সকালে খুলনায় এসে পৌঁছে পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটি। দুপুরে জেলগেটে গৃহবধূর বক্তব্য শোনেন পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার জিআরপি থানায় গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গঠন করে দেয়া তদন্ত কমিটির প্রধান এসপি সেহেলা পারভীন ওসির কক্ষে বসে থানার পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন। এ সময় সেখানে তদন্ত কমিটির অপর তিন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

পাশের কক্ষে (ডিউটি অফিসারের কক্ষ) গিয়ে দেখা যায়, পাকশী রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রধান এএসপি ফিরোজ আহমেদ ওই থানার পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন। ওই কক্ষে তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রধান এসপি সেহেলা পারভীন বলেন, একজন নারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সকাল ১০টার দিকে খুলনা জেলা কারাগারের গেটে ওই গৃহবধূকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার কাছে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। ঘটনার দিন রাতে থানায় যা ঘটেছিল তদন্ত কমিটিকে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন গৃহবধূ।

এসপি সেহেলা পারভীন বলেন, গৃহবধূর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, তাকে কোথা থেকে কীভাবে আটক করা হয়েছিল, থানায় কি ঘটেছিল। সে বিষয়সহ আরও বেশকিছু বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে তার কাছে। ওই গৃহবধূ আমাদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তবে ওই গৃহবধূ কি বলেছেন তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন এসপি সেহেলা পারভীন।

তিনি বলেন, ওই দিন রাতে থানায় যাদের ডিউটি ছিল তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে এ বিষয়ে ব্রিফ করা হবে। তখন বিষয়টি জানতে পারবে সবাই।

পাকশী রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রধান এএসপি ফিরোজ আহমেদ বলেন, ভুক্তভোগী গৃহবধূর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে তাদের জিআরপি থানায় আসতে বলা হয়েছে। এখনো তারা আসেননি। তারা এলে তাদের বক্তব্য শোনা হবে।

এদিকে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গঠন করা তদন্ত কমিটির কাছে থানায় আটকে গণধর্ষণের কথাই বলেছেন ওই গৃহবধূ। খুলনার জিআরপি থানা পুলিশের ওসি ওসমান গনি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ তাকে ধর্ষণ করেছেন বলে তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন তিনি। আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যেভাবে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ঠিক একইভাবে তদন্ত কমিটিকেও ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন গৃহবধূ।

এর আগে রোববার খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালতে দাঁড়িয়ে থানার ভেতরে আটকে পাঁচ পুলিশের গণধর্ষণের বর্ণনা দেন ওই গৃহবধূ। জিআরপি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গনি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য থানায় আটকে তাকে ধর্ষণ করেছেন বলে বিচারককে জানান তিনি।

তার বর্ণনা শুনে আদালতের বিচারক ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে রোববার রাতে তাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলেও সময় স্বল্পতার কারণে তা হয়নি। ফলে সোমবার দুপুরে তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।

থানায় গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূর বড় বোন বলেছেন, আমার বোনের শ্বশুরবাড়ি সিলেটে। আমার মা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকায় দেখতে খুলনায় আসে বোন। বোন নিজে অসুস্থ থাকায় বৃহস্পতিবার যশোরে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিল। শুক্রবার যশোর থেকে আসার সময় ফুলতলা এলাকায় জিআরপি পুলিশ প্রথমে তাকে মোবাইল চুরির অপরাধে থানায় ধরে নিয়ে যায়।

শুক্রবার বিকেলে জিআরপি পুলিশ প্রথমে বলেছে আমার বোন মোবাইল চুরি করে ধরা পড়েছে। পরে জানায় তাকে ছাড়াতে এক লাখ টাকা লাগবে। টাকা না দিলে কি করে আদায় করা যায় তা নাকি পুলিশ জানে। পরে টাকা না দিয়ে থানা থেকে চলে আসি আমরা।

তিনি আরও বলেন, আমরা থানা থেকে বের হয়ে আসার পর ওই দিন রাতে থানা হাজতে আমার বোনকে বিবস্ত্র করে ওড়না দিয়ে হাত-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। এরপর ওসি ওসমান গনির নেতৃত্বে আরও চার পুলিশ আমার বোনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ সময় তাকে মারপিটও করা হয়। পরদিন শনিবার পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ আমার বোনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।

রোববার তাকে আবার আদালতে আনা হয়। তখন আদালতে বিচারকের সামনে নেয়ার পর জিআরপি থানায় গণধর্ষণের বর্ণনা দেয় আমার বোন। তখন আদালতের বিচারক তার ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ দেন।

এ ঘটনায় পাকশী রেলওয়ের পুলিশ সুপার সোমবার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। একই সঙ্গে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয় পুলিশ সদর দপ্তর। এরই মধ্যে গণধর্ষণের অভিযোগে ওসি ওসমান গনি পাঠান ও এসআই নাজমুল হককে ক্লোজড করা হয়েছে।

আলমগীর হান্নান/এএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।