‘শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে নুসরাত’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফেনী
প্রকাশিত: ০৬:৫৩ পিএম, ০৮ আগস্ট ২০১৯

ফেনীর আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় চিকিৎসক-সেবিকাসহ চারজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়।

ফেনী জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ জানান, আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলায় ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত আদালতে ৮৪ জনের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ, বার্ন ইউনিটের মেডিকেল অফিসার ডা. ওবায়দুল ইসলাম ও ডা. এ কে এম মনিরুজ্জামান এবং সিনিয়র স্টাফ নার্স অর্চনা পাল আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরে আসামি পক্ষের কৌঁসুলিরা তাদের জেরা করেন।

তিনি আরও জানান, ১৮ আগস্ট মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত। ওইদিন চট্টগ্রাম সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ও হস্তলিপি বিশেষজ্ঞ মো. শামছুল আলমের সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, সাক্ষ্য প্রদানকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘গত ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যু হলে পরদিন পুলিশ কনস্টেবল রমজান আলী মরদেহ নিয়ে এলে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করি। এ সময় একই বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. প্রদীপ বিশ্বাস ও ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস উপস্থিত ছিলেন। আমরা সুরতহাল প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করি।’

সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরিকালে কী পেয়েছেন আদালতে তিনি তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

আরেক সাক্ষী ডা. ওবায়দুল ইসলাম সাক্ষ্য দেয়ার সময় আদালতকে বলেন, ‘গত ৬ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ডা. এ কে এম মনিরুজ্জামান ও সিনিয়র স্টাফ নার্স অর্চনা পালের সামনে নুসরাত জাহান রাফীর মৃত্যুর আগে জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি। জবানবন্দি প্রদানকালে নুসরাত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটনার বিভিন্ন অংশ বর্ণনা দিয়েছে। জবানবন্দি লেখা হলে আমি তা পড়ে শোনাই। তখন তার স্বাক্ষর করার মতো অবস্থা ছিল না বলে টিপসই নেয়া হয়।’

লিখিত জবানবন্দিতে তিনজনেরই স্বাক্ষর আছে বলে আদালতকে জানান তিনি।

ডা. এ কে এম মনিরুজ্জামান ও সিনিয়র স্টাফ নার্স অর্চনা পাল আদালতে একই বক্তব্য উপস্থাপন করায় ডা. ওবায়দুল ইসলামের সাক্ষ্যটি উভয়ের সাক্ষ্য বলে গ্রহণ করেন আদালত।

চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ জনের সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

রাশেদুল হাসান/এমবিআর/এমকেএইচ

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।