ঈদের ছুটিতে বাড়তে পারে ডেঙ্গুর প্রকোপ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝালকাঠি
প্রকাশিত: ১২:৪৬ পিএম, ০৮ আগস্ট ২০১৯
ফাইল ছবি

আসন্ন ঈদুল আজহার সময় দেশের অন্যান্য জেলার মতো ঝালকাঠিতেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও প্রকট হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, ঈদ উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লক্ষাধিক মানুষ ঝালকাঠি আসবেন। এর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তদের অনেকে থাকতে পারেন। আর তাদের মাধ্যমে দ্রুতই এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে সারা জেলায়।

এদিকে ওই সময় টানা বৃষ্টিপাত হলে অথবা কয়েকদিন রোদ থাকলে ডেঙ্গু বিস্তারের শঙ্কা নেই, বরং বর্তমান প্রকোপের মাত্রা কমে আসবে। কিন্তু যদি থেমে থেমে বৃষ্টি হয়, তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।

এ ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে। এজন্য জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের সবার ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

গত ১০ দিনে ঝালকাঠি জেলায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ২০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। ঢাকা থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৮ জুলাই রাজাপুরের হালদারখালি গ্রামে ১ নারী শিক্ষকের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু অন্যান্য জ্বরের মতো একটি ভাইরাস জ্বর। অন্য ভাইরাসের মতো ডেঙ্গুও অনুকল পরিবেশে মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটায়। আক্রান্ত মানুষকে কোনো এডিস ইজিপ্টি বা এডিস এলবোপিকটাস মশা যদি কামড়ালে সেটি ডেঙ্গুর বাহকে পরিণত হয়। একটি এডিস মশা খাদ্যের চাহিদা পূরণে পাঁচজনকে কামড়াতে পারে। অর্থাৎ একটি এডিস মশা দ্বারা ৫ জন মানুষের ডেঙ্গুতে আক্রান্তের আশঙ্কা থাকে। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত এডিস মশার প্রজননে সহায়ক ভূমিকা রাখে। ঈদের সময় এরকম আবহাওয়া থাকলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এডিস মশার দুটি জাত রয়েছে। একটি এডিস ইজিপ্টি। এটি শহুরে মশা। এর মাধ্যমেই ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। অপরটি এডিস এলবোপিকটাস। এটি মূলত গ্রাম এলাকার মশা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরীক্ষা করে দেখেছে, এ মশাও ধীরে ধীরে ডেঙ্গুর বাহকে পরিণত হয়েছে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ঈদে গ্রামে এলে এডিস এলবোপিকটাস মশার মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে পড়াই স্বাভাবিক।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ঝালকাঠি জেলা শাখার সভাপতি ডা. নওশের আলী বলেন, ঈদের সময় অসংখ্য মানুষ বাড়িতে আসবে। তাদের মাধ্যমেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়তে পারে।

তিনি বলেন, বাস-লঞ্চ ছাড়ার আগে মশা নিধন করা হবে না। তাছাড়া চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গু বিষয়ে যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, সেটি ঢাকা কেন্দ্রিক। তাই ঈদের সময়ে যখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে রোগটি ছড়াতে থাকবে, তখন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে প্রথমে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসকদের ডেঙ্গু রোগ ও এর চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।

ঈদে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে কী ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. শ্যামল কৃষ্ণ হাওলাদার বলেন, ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় জেলার কাউকে ঈদের ছুটি দেয়া হবে না। যারা ছুটিতে ছিলেন তাদেরকেও কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের কাছে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য কিছু কিট পাঠানো হয়েছে। তবে তা জেলার চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল এ কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভিত্তিক চাহিদা পাঠানো হয়েছে। তা ২/১ দিনের মধ্যেই এসে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা ভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। যাতে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়।

মো. আতিকুর রহমান/এমএমজেড/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।