সকাল থেকে গভীর রাত টুং টাং শব্দ কামারশালায়
আর মাত্র কয়েকদিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন মেহেরপুরের কামাররা। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দম ফেলার ফুসরত থাকছে না তাদের। দিনরাত পশু জবাই ও কাটার বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি ও সান দিতে ব্যস্ত। কামারশালার টুং টাং শব্দে মুর্ছনার সৃষ্টি হয়। কামার পরিবাররা এ সময়টার জন্যই অপেক্ষায় থাকেন সারা বছর।
মেহেরপুরের আমঝুপি, বুড়িপোতা, মানিকদিয়া, ষোলটাকা, বামন্দি গাংনীসহ বিভিন্ন বাজারে কামাররা বিরতিহীনভাবে কাজ করছেন। ঈদুল আজহা উপলক্ষে মুসলমানরা পশু কোরবানীর জন্য নতুন ছুরি, দা, বটি ইত্যাদি কেনা এবং পুরোনোগুলো লোনা পানিতে সান দেয়ার জন্য ছোটেন কামারের কাছে। আর কামাররা ও কোরবানির ঈদ আসলে পুরো বছরের ঘাটতি পুষিয়ে নেন।
মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামররা। তারা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দা, ছুরি, চাপাতি, কুড়াল তৈরি ও শান দিচ্ছেন। অনেক কামার নতুন কাজ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। যদিও বছরের অন্য সময় তাদের কাজের তেমন চাপ থাকে না।
এদিকে এই সময় কাজের চাপ বেশি হওয়ায় অনেক স্থানে দেখা মিলছে মৌসুমী কামারের। বছরের প্রায় সময় কাজ না থাকায় জেলার অনেক কামার এ পেশা ছেড়ে অন্য কাজ ধরেছেন। তারাও এ মৌসুমটাকে কাজে লাগাচ্ছেন।
মানিকদিয়ার বুদু কামার জানান, প্রতি বছর এক ঈদ মৌসুমেই যত কেনাবেচার ধূম। আর এ থেকে অর্জিত টাকা আর অন্য কাজ করে যা পাই তা দিয়েই সারা বছর সংসার চালাতে হয়। কোরবানি ঈদ এলে কাজ বেড়ে যায়। ছোট ছুরি থেকে শুরু করে বড় ছুরি ও দাসায় শান দেয়ার জন্য ৩০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। আবার নতুন ধারালো অস্ত্র তৈরি করেও বাজারে বিক্রি করা হয়। রকম ভেদে বিভিন্ন অস্ত্রের দাম ভিন্ন ভিন্ন। ৫৫ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকার ধারালো অস্ত্র বিক্রি হচ্ছে যেগুলো কোরবানির পশু জবাই, চামড়া ও মাংস ছাড়ানো ছাড়াও দৈনন্দিন কাজে লাগবে।
শিল্পী জীবন কর্মকার ও সুমন কর্মকার জানান, এক সময় কামারদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। ফলে আমাদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ আকর্ষণ হারাচ্ছে। হয়তো বা এক সময় এই পেশা আর থাকবে না। তবে কোরবানির ঈদের সময় আমরা একটু আশাবাদী হই। এ সময় আমাদের রোজগার ভাল হয়।
মেহেরপুরে বাজারে দেখা গেছে, কামারদের তৈরি বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র বিক্রি হচ্ছে। সাইজ ও ওজন ভেদে দাম একেক রকম। একটা দা দেড়শ টাকা থেকে পাঁচশ টাকা, ছোট ছুরি ৫০ টাকা থেকে দেড়শ টাকা, বড় ছুরি আড়াইশ টাকা থেকে তিনশ টাকা। কয়লা আর লোহা ইস্পাতের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের তৈরি অস্ত্রের দামও বেশি পড়ছে।
আসিফ ইকবাল/এমএমজেড/জেআইএম