৫ পুলিশের গণধর্ষণের ঘটনা তদন্তে পুলিশ, সাথে অভিযুক্ত এসআই
খুলনার জিআরপি থানায় আটকে গৃহবধূকে (২১) ওসিসহ পাঁচ পুলিশের গণধর্ষণের ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্তকাজ শুরু করে পুলিশের তদন্ত কমিটি।
এ সময় তদন্ত কমিটির প্রধান কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদ বলেন, জিআরপি (রেলওয়ে) থানা পুলিশের ওসি ওসমান গনির উচিত ছিল এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা। সেই সঙ্গে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানানো উচিত ছিল তার। কিন্তু সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি ওসি।
দুপুরে খুলনায় এসে পৌঁছান তদন্ত কমিটির সদস্যরা। সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্তকাজ শুরু করে তদন্ত কমিটি। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদ।
এর আগে সোমবার পাকশী রেলওয়ের পুলিশ সুপার গণধর্ষণের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শ. ম কামাল হোসাইন ও মো. বাহারুল ইসলাম। আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমরা এখানে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য সব চেষ্টাই চালিয়ে যাব। কোনো সাক্ষী থাকলে তার সঙ্গে কথা বলব। আদালতের কোনো নির্দেশনা থাকলে তা গ্রহণ করে সেই অনুযায়ী তদন্তকাজ চালাব।
ফিরোজ আহমেদ বলেন, গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনাটি লোকমুখে শোনা কথা। এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তবে অভিযোগ না হলেও ওই নারী আদালতে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। আমরা তার সঙ্গে কথা বলব। সাতদিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।
এদিকে তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদ যখন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তখন তার সঙ্গে গৃহবধূকে গণধর্ষণে অভিযুক্ত পুলিশের এসআই গৌতম ছিলেন। এসআই গৌতম তদন্ত কমিটির প্রধানের পাশে থাকায় আশপাশে থাকা অনেকেই তদন্তের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
অন্যদিকে থানায় আটকে গৃহবধূকে পাঁচ পুলিশের গণধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে জনউদ্যোগ খুলনা। মানববন্ধনে ঘটনার সঠিক তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূর আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, গণধর্ষণের অভিযোগের বিষয়টি আদালতকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ফরেনসিক রিপোর্ট আসার পর এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
খুলনা মহানগরের পিপি কেএম ইকবাল হোসেন বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন ও ফরেনসিক রিপোর্ট আসার পর আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের চাকরিতে বহাল রেখে তদন্তকাজ প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। অভিযুক্তদের সাময়িক বরখাস্তের দাবি জানাই আমরা।
এর আগে রোববার খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকের কাছে থানার ভেতরে আটকে পাঁচ পুলিশের হাতে গণধর্ষণের বর্ণনা দেন ওই নারী। জিআরপি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গনি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য থানায় আটকে তাকে ধর্ষণ করেছে বলে বিচারককে জানান তিনি।
তার বর্ণনা শুনে আদালতের বিচারক ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে রোববার রাতে তাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলেও সময় স্বল্পতার কারণে তা হয়নি। ফলে সোমবার দুপুরে তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।
ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর বড় বোন বলেন, ‘আমার বোনের শ্বশুরবাড়ি সিলেটে। আমার মা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকায় দেখতে খুলনায় আসে বোন। বোন নিজে অসুস্থ থাকায় বৃহস্পতিবার যশোরে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিল। শুক্রবার যশোর থেকে আসার সময় ফুলতলা এলাকায় জিআরপি পুলিশ প্রথমে তাকে মোবাইল চুরির অপরাধে থানায় ধরে নিয়ে যায়।’
শুক্রবার বিকেলে জিআরপি পুলিশ প্রথমে বলেছে, আমার বোন মোবাইল চুরি করে ধরা পড়েছে। পরে জানায়, তাকে ছাড়াতে এক লাখ টাকা লাগবে। টাকা না দিলে কি করে আদায় করা যায় তা নাকি পুলিশ জানে। পরে টাকা না দিয়ে থানা থেকে চলে আসি আমরা।
তিনি আরও বলেন, আমরা থানা থেকে বের হয়ে আসার পর ওই দিন রাতে থানা হাজতে আমার বোনকে বিবস্ত্র করে ওড়না দিয়ে হাত-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। এরপর প্রথমে ওসি ওসমান গনি পাঠান ও পরে আরও চার পুলিশ আমার বোনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ সময় তাকে মারপিটও করা হয়। পরদিন শনিবার পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ আমার বোনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।
রোববার তাকে আবার আদালতে আনা হয়। তখন আদালতে বিচারকের সামনে নেয়ার পর জিআরপি থানায় গণধর্ষণের বর্ণনা দেয় আমার বোন। তখন আদালতের বিচারক তার ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ দেন।
আলমগীর হান্নান/এএম/এমএস