৬ দিনে ২২ ডেঙ্গু রোগী মেহেরপুরে
ঢাকা থেকে নয় মেহেরপুরে থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন মেহেরপুর জেলার মানুষ। এ পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে চারজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিদের মধ্যে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে একজন এবং গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ভর্তি রয়েছেন।
গত ৩১ জুলাই থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জেলায় চিকিৎসা নিয়েছেন ২২ রোগী। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১২ জন।
সাজেদুল ইসলাম (১৬)। বাড়ি গাংনী উপজেলার জুগিন্দা গ্রামে। গত রোববার বাড়িতে গোসল করার সময় সাজেদুলের হাতে বসে একটি মশা। মশাটি তাকে কামড় দেয়ার আগেই সে থাবা দিয়ে মেরে ফেলে। বড় বড় পা ও শরীরের গঠন ভিন্ন হওয়ায় এডিস মশা বলে সন্দেহ হয় তার। মশা সঙ্গে নিয়েই মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে আসে সাজেদুল। তার রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গু এনএস-১ পজেটিভ পান চিকিৎসকরা।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডা. সজিব উদ্দিন স্বাধীন বলেন, যে এডিস মশাটি ওই কিশোর মেরেছে সেটি তাকে কামড় দেয়নি। তার বাড়ির আশপাশে এডিস মশা রয়েছে। কয়েকদিন আগেই তাকে কামড় দিয়েছে। কারণ এডিস মশা কামড়ালে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া হয় না। কয়েক দিন সময় লাগে।
রিমপা খাতুন। বয়স ১০ বছর। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আযান গ্রামের রিপন আলীর মেয়ে। স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ জ্বর অনুভব করে রিমপা। সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অংশে লাল র্যাশ বের হয়। বাবা-মা মনে করেছিলেন জ্বরের সঙ্গে অ্যালার্জি হয়েছে। গ্রামের ওষুধের দোকান থেকে জ্বর ও অ্যালার্জির ওষুধ নিয়ে মেয়েকে খাওয়ান।
কিন্তু রোববার সকাল পর্যন্ত জ্বর ও র্যাশ না কমায় সকালে মেহেরপুর শহরের সনো ল্যাবে রক্ত পরীক্ষা করার পর ডেঙ্গু পজিটিভ শনাক্ত হয়। সেখান চিকিৎসকের পরামর্শে দুপুর ১টার দিকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় রিমপাকে। এভাবেই মেহেরপুরে একের পর এক ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই সকালে মেহেরপুরের গাংনীতে আম্বিয়া খাতুন নামে এক গৃহবধূ প্রথম ডেঙ্গু রোগী হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন। তারপর থেকেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সরকারি ও বেসরকারি হিসাবে রোববার দুপুর পর্যন্ত ২২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে মেহেরপুর জেলায়। তার মধ্যে ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন অনেকে। স্থানীয়ভাবেও চারজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডেই আইসোলেশন বিভাগের দুটি কক্ষ ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারণ করে সেখানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ওই ওয়ার্ডের সেবিকা মালতি দাস জানান, গত ৩১ জুলাই থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ১২ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। একজনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে অন্যত্র রেফার্ড করেছেন চিকিৎসক।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন শামীম আরা নাজনীন জানান, মেহেরপুরে আক্রান্তদের মধ্যে এখনো কারোরই ডেঙ্গু শকড সিনড্রোম দেখা যায়নি। তারপরও আমরা প্রত্যেক ডেঙ্গু রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। তারা যাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পায় সেদিকে খেয়াল রাখছি।
আসিফ ইকবাল/এফএ/এমকেএইচ