ভারতীয় গরুর শঙ্কায় নওগাঁর খামারিরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০১:২১ পিএম, ০৫ আগস্ট ২০১৯

নওগাঁর বিভিন্ন হাট কোরবানির পশুতে ভরে গেছে। তবে সেই তুলনায় ক্রেতাদের আনাগোনা অনেকটাই কম।

প্রান্তিক খামারিরা জানিয়েছেন তারা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু পালন করে হাটে নিয়ে আসছেন। এ জন্য যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে সেই তুলনায় হাটে দাম কম বলছেন ক্রেতারা। এছাড়া ভারত থেকে গরু আসলে তাদের লোকসান গুনতে হবে।

আর মাত্র কয়েক দিন বাদেই কোরবানির ঈদ। এ উপলক্ষে গবাদিপশু আসা শুরু করেছে নওগাঁর বিভিন্ন পশুর হাটে। জেলার সবচেয়ে বড় পশু কেনাবেচার হাট মান্দার চৌবাড়িয়া ও সতিহাট, মহাদেবপুরের মাতাজী ও সাপাহারের দিঘীর এবং পোরশার মর্শিদপুর হাট।

গত শুক্রবার চৌবাড়িয়া হাটে বিপুল সংখ্যক গরু আমদানি হয়। এ হাটে প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে প্রায় ৫-৬ হাজার পশুর আমদানি হয়। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় হাটের নির্দিষ্ট সীমানা ছাড়িয়ে সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

Naogaon

গ্রামের প্রান্তিক মানুষ লাভের আশায় দেশি জাতের গরু মোটাতাজা করে বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে আসছেন। প্রতিটি দেশি জাতের গরু ৩৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে কেনাবেচা হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কম এবং সাধারণ মানুষ কেনার চাইতে ঘুরে ঘুরে দেখছেন। শেষ পর্যন্ত এ অবস্থা থাকলে লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করতে হবে কিংবা অনেক গরু অবিক্রীত থেকে যাবে। সারণত বড় গরুর চেয়ে ছোট গরুর চাহিদা থাকে বেশি।

খামারিরা বলছেন, গরু মোটাতাজা করতে গিয়ে গো খাদ্যের দাম বেশি পড়েছে। তবে সে তুলনায় হাটে নিয়ে আসা গরুর দাম কিছুটা কম বলে জানিয়েছে তারা।

অপরদিকে, এ হাটে প্রায় ৫০০টি ভারতীয় গরু আমদানি হয়েছে। কয়েক মাস আগে স্থানীয়রা এসব গরু নিজ খামারে রেখে মোটতাজা করেছেন। প্রতিটি গরুর দাম প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা।

জেলার পোরশা উপজেলার আব্দুর রহমান বলেন, বাড়িতে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে খৈল, ভ‚ষি, ব্যান্ড গুঁড়া, চালের খুদ ও খড় দিয়ে গরু লালন পালন করা হয়েছে। খাবারের দাম বেশি। প্রতিদিন গরু প্রতি দেড়শ থেকে দুইশ টাকা খরচ হয়েছে।

তিনি আরও এবার দুটি ষাঁড় নিয়ে এসেছেন। তবে দাম তুলনামূলক কম বলছেন ক্রেতারা। আর হাটে প্রচুর ভারতীয় গরু উঠেছে। ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কম। এজন্য হয়ত গরুর দাম কমে গেছে।

Naogaon

মান্দার মজিদপুর গ্রামের রফিক বলেন, গত ১০ মাস আগে চারটি ভারতীয় গরু (বলদ) ৬ লাখ টাকা দিয়ে কিনে খামারে রেখে লালন পালন করেছি। হাটে নিয়ে এসে দাম চেয়েছি ১২ লাখ টাকা। ব্যবসীরা ১০ লাখ টাকা বলেছেন।

ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিনি চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন। গত তিন বছর যাবত এ হাট থেকে গরু কিনছেন। এবার দুই ট্রাক গরু কেনার জন্য এসেছিলেন। হাটে গরুর দাম তুলনামূলক বেশি। যে গরুর দাম ৮০ হাজার হবে সেটা দাম চাওয়া হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

রোববার ছিল মহাদেবপুরের চকগৌর হাট। গরু বিক্রেতা সাহেব আলী বলেন, কষ্ট করে বাড়িতে দুটি বলদ লালন পালন করেছেন। হাটে নিয়ে এসে সঠিক দাম পাননি। যে গরুর দাম ৫০ হাজার টাকা হবে সেখানে ক্রেতারা বলছেন ৩৫-৪০ হাজার টাকা।

মান্দা চৌবাড়িয়া হাটের ইজারাদার আবুল বাসার সুজন বলেন, জেলার মধ্যে বৃহৎ হাট চৌবাড়িয়া। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা বৃহৎ এ হাটে পশুর কেনার জন্য আসেন। গত শুক্রবার থেকে ঈদের হাট জমতে শুরু করেছে। গরুর দাম তুলনামূলক কম এবং সহনীয়। হাটের নিরাপত্তায় পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতা করছেন। এছাড়া সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

Naogaon

নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উত্তম কুমার দাস বলেন, ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে খামারিরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং ভেজালমুক্ত খাবার দিয়ে পশু লালন পালন করেছেন। জেলার ১১ উপজেলায় এ বছর ৩২ হাজার ২৪২টি খামারে প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার কোরবানির পশু প্রতিপালন করা হয়েছে। জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার। অবশিষ্ট পশু দেশের অন্য জেলার চাহিদা পূরণে সরবরাহ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, গত বছর খামারিরা ভালো লাভ করেছিলেন। যদি ভারত থেকে পশু না আসে তাহলে এ বছরও খামারিরা লাভবান হবেন।

আব্বাস আলী/এমএমজেড/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।