নরসিংদীতে ২৪ ঘণ্টায় তিনটি হত্যাকাণ্ড


প্রকাশিত: ০২:৫০ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

নরসিংদীতে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে স্কুলছাত্রকে শ্বাসরোধ করে হত্যাসহ তিনটি হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়েছে।

সোমবার বিকেল ৬টার দিকে হাজিপুর, পৌর শহরের ভেলানগর এবং রোববার রাতে পলাশে একটি হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়।

নিহতরা হলো, হাজীপুর বৌ-বাজার এলাকার নারায়ণ দাশের ছেলে শুভ দাশ (২৬), শিবপুরের কারারচর মৌলভী তোফাজ্জল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক ছাত্রী (১৫) এবং পলাশ উপজেলার পারুলিয়া টেঙ্গরপাড়া এলাকার আবদুল জলিলের মেয়ে।

এসব ঘটনায় হত্যা, ধর্ষণ নারী নির্যাতনসহ পৃথক আইনে পলাশ ও সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে।

পুলিশ  ও নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেলে হাজীপুর বৌ-বাজার এলাকার খাওয়া-দাওয়া শেষে বাড়ি থেকে বের হয় শুভ দাশ। সে বাড়ি থেকে বের হয়ে বিকেল পৌনে ৬টার দিকে হাজীপুর ব্রিজ এলাকায় পৌঁছলে পূর্ব থেকে সেখানে থাকা সন্ত্রাসীরা অতর্কিত তার উপর হামলা চালায় এবং সন্ত্রাসীরা তার শরীরের বিভিন্নস্থানে কুপিয়ে আহত করে। এসময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগে নরসিংদী শহরের ভেলানগরে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে (১৫) শ্বাসরোধ করে হত্যা করে গৃহশিক্ষক।

স্বজনরা জানিয়েছে, দেড় বছর পূর্বে ভেলানগর এলাকায় রিয়াজুল হকের বাড়িতে গৃহশিক্ষক হিসেবে বাড়িতে আসে আলমগীর নামে এক যুবক। তার বাড়ি মনোহরদী উপজেলার আগানগর গ্রামে। সে স্থানীয় নরসিংদী ল কলেজে এলএলবি পড়তো। এরই মধ্যে আলমগীরের চোখ পড়ে রিয়াজুল হকের মেয়ের প্রতি। কিছুদিন আগে ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাবও দেয় আলমগীর।

গত রোববার ওই ছাত্রীর বাবা-মা তাকে বাড়িতে রেখে বেড়াতে যায়। বাবা-মার অনুপস্থিতে রাত ১২টার দিকে ওই ছাত্রীর ঘরে প্রবেশ করে আলমগীর। এসময় আলমগীর কৌশলে ওই ছাত্রীর নানী আক্তার বেগমকে ঘর থেকে বের করে দেয়। ঘরের ভিতর থেকে সাড়াশব্দ না পেয়ে কিছুক্ষণ পর নানী ঘরে ঢুকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তার নাতনীকে। নানীর ডাক চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

ওই ছাত্রীর বাবা সাংবাদিকদের বলেন, বাবা-মার পরের স্থান হলো শিক্ষকের। সেই শিক্ষক আমার ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়েটিকে নির্মমভাবে হত্যা করলো। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই । ভবিষ্যতে যেন আর কোনো শিক্ষক এমনভাবে কোনো ছাত্রীকে হত্যা করার সাহস না পায়।

নরসিংদীর সদর মডেল থানা পুলিশের ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবু তাহের দেওয়ান বলেন, নিহত ছাত্রীর গলায় দাগ পাওয়া গেছে। এতে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

এই ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। সন্দেহভাজনকে ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।

এদিকে রোববার রাতে জেলার পলাশ উপজেলায় নাসরিন আক্তার নামে এক নারী শ্রমিককে ধর্ষণের পর কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

স্বজনরা জানিয়েছে, রাতে প্রতিদিনের ন্যায় নিজ ঘরে একাই ঘুমিয়ে ছিলেন নাসরিন। সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠে নিহতের ভাই আল-আমিন বোন নাসরিনের ঘরের দরজা খোলা দেখতে পায়। এসময় ঘরে গিয়ে নাসরিনের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়।

পলাশ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

নিহতের ছোট ভাই আলামিন জানায়, এক বছর পূর্বে নেশাগ্রস্ত স্বামীর সাথে ছাড়া-ছাড়ি হয় নাসরিনের। তাই বর্তমানে সে বাবার বাড়িতেই থাকতো। সে ঘোড়াশালে প্রাণ-ফ্যাক্টরিতে কাজ করতো। সংসারে অভাবের কারণে এতিমখানায় পাঠিয়ে দেয় ৬ বছরের একমাত্র মেয়েকে।

পলাশ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, নিহতের গলার বাম পাশে ধারালো অস্ত্রের ২টি আঘাত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

সঞ্জিত সাহা/ এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।