প্লাস দিয়ে হাত-পায়ের নখ তুলে যুবক হত্যা
মোবাইল চুরির অপবাদে প্লাস দিয়ে এক যুবকের হাত-পায়ের নখ তুলে নির্যাতনের পর হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত যুবকের নাম সাইফুল (২৫)। রোববার রাতে যশোরের শার্শা উপজেলার উলাশী ইউনিয়নের হাড়িখালি-যদুনাথপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ওই রাতেই চুরি যাওয়া মোবাইলের মালিক রাশিদা খাতুন (৩২) ও আয়ুব আলী (৩৪) নামে আরেকজনকে আটক করেছে। আটক রাশিদা খাতুন একই গ্রামের প্রবাসী রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ও আয়ুব আলী ইয়াজউল্লাহ’র ছেলে। তাদের থানা হাজতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির জন্য সোমবার সকালে যশোর আদালতে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় রোববার রাতেই একই গ্রামের ১০ জনকে আসামি করে শার্শা থানায় মামলা করা হয়েছে। আসামিরা সবাই আওয়ামী লীগের গ্রাম পর্যায়ের নেতাকর্মী। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার নেতৃত্ব দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মহল উদ্দিন। তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আইনাল হক গ্রুপের সঙ্গে জড়িত।
সরেজমিনে জানা যায়, নিহত সাইফুলের আত্মীয়-স্বজনেরা আওয়ামী লীগের অন্য একটি গ্রুপের সঙ্গে জড়িত থাকলেও সাইফুল ও তার পরিবার জামায়াতের সমর্থক বলে এলাকার অনেকে জানিয়েছেন। তবে সে এলাকায় নানা অপকর্মের পাশাপাশি চুরি ছিনতাইয়ের সঙ্গেও জড়িত ছিল বলে জানা গেছে। এর আগেও কয়েকবার তাকে এ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হলেও সে এ কাজ থেকে সড়েনি।
এলাকার লোকজন জানান, শনিবার রাতে ওই গ্রামের প্রবাসী রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রাশিদা বেগমের একটি মোবাইল ফোন হারিয়ে যায়। সন্দেহ করে রোববার ভোর রাতে ওই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা মহল উদ্দিন ও তার ছেলে রানা, একই গ্রামের ওসমানের ছেলে শহিদুল, রফিকুল ইসলাম, নজরুল মাস্টার, বজলু রহমানের ছেলে শামিমসহ ১০/১২ জন যুবক সাইফুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর তার ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে সাইফুলের হাত ও পায়ের নখ প্লাস দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়। এছাড়া সাইফুলের গোপনাঙ্গ থেতলে দেয়া হয় ইটের আঘাতে। ভেঙে দেয়া হয় তার দুই পায়ের হাঁটু। রক্তাক্ত ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেয়া হয় কাঁচা ঝাল ও লবন। পানি পানি” বলে চিৎকার করলেও পাষণ্ড ওই নির্যাতনকারীরা সাইফুলকে এক ফোটাও পানি খেতে দেয়নি। ছটফট করতে করতে একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সাইফুল। ঘটনাটি গ্রামের অনেকে দেখলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। কারণ নির্যাতনকারীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মী। তারা দুর্ধর্ষ প্রকৃতির।
রোববার সকালে সাইফুলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ঘাতকরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। সকালে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী নির্যাতনকারীদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালায়। পরে সাইফুলের লাশ নিয়ে এলাকাবাসী বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং যশোর-সাতক্ষীরা সড়ক অবরোধ করে। তারা এসময় হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সোমবার সকালের দিকে নারীদের অনেককে ঘরের আসবাবপত্রসহ হাড়ি পাতিল নিয়ে নসিমনে চলে যেতে দেখা গেছে।
এদিকে, যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক জানান, সাইফুলকে মোবাইল চুরির অপবাদ দেয়া হলেও কোনো আলামত মেলেনি। তবে সে এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনায় ১০ জনের নামে মামলা হয়েছে। এজাহারভূক্ত আসামি রাশিদা খাতুন ও আয়ুব আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের আটকে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জামাল হোসেন/এমএএস