নীল রঙে মুখরিত টাঙ্গুয়ার হাওর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৯:২১ এএম, ০৪ আগস্ট ২০১৯

টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম গ্রুপ জলমহালগুলোর অন্যতম। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বিপুল সম্ভাবনা এবং প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য রয়েছে এই হাওরে।

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা এবং তাহিরপুর উপজেলার জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ মিঠা পানির এ হাওর বাংলাদেশের ২য় রামসার এলাকা। যেখানে রয়েছে সারি সারি হিজল-করচ গাছ আর পাখিদের কলকাকলি।

মাছ, পাখি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর এক বিশাল অভয়াশ্রম টাঙ্গুয়ার হাওর। এক সময় এর এত পরিচিতি না থাকলেও বিগত কয়েক বছরে এই হাওর হয়ে উঠেছে ভ্রমণ পিপাষুদের অন্যতম জনপ্রিয় স্থান।

১৯৯১ সালে ইরানে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে রামসার কনভেনশন অনুযায়ী টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পায়। এরপর সরকারের সুনজরে পরে বিপুল সম্পদে সমৃদ্ধ মিঠাপানির এই হাওর। সুন্দরবনের পর টাঙ্গুয়ার হাওরকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয় ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি। এরপর ২০০৫ সালে এই হাওরকে জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার নির্দেশনা দেয় সরকার। তারপর থেকেই টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার তথা বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা।

ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওর প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। ১৮টি মৌজায় ৫২টি হাওরের সমন্বয়ে ৯৭২ হেক্টর এলাকা নিয়ে এই হাওর জেলার সব চেয়ে বড় জলাভূমি।

Tangua-2

শুষ্ক মওসুমে এই হাওরের অন্তর্গত ৫১টি জলমহালের আয়তন ছয় হাজার ৯১২ একর হলেও বর্ষায় তা বেড়ে ২৪ হাজার একরের বিশাল সাগরে পরিণত হয়।

শীতকালে টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় তিনগুণ। এসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে উড়ে আসে নানা প্রজাতির অতিথি পাখি। আর বর্ষাকালে পানিতে থৈ থৈ করে পুরো হাওর। এ সময় হাওরকে বিশাল এক সাগর মনে হয়। আর সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই ভিড় করেন শত শত পর্যটক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব রকমের সহযোগিতা দেয়া হয়।

সম্প্রতি টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আনাগোনা বেশি। নৌকা নিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন পর্যটকরা। এখানে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা তেমন একটা ভালো না হলেও স্থানীয় রাঁধুনীদের সহায়তায় পেট ভরতে পারেন পর্যটকরা। চাইলে রাতে হাওরে কাটি জোছনাও উপভোগ করতে পারেন তারা।

এদিকে টাঙ্গুয়ার হাওরে বর্তমান সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সম্প্রতি বন্যায় সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় পর্যটকদের আসা-যাওয়ায় অনেকটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

কথা হয় বেদুইন ফেইসবুক গ্রুপের সদস্য জামাল হোসেন বিপ্লবের সঙ্গে। তিনি বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর সত্যিই একটি সুন্দর জায়গা। এখানে এলে প্রকৃতির আসল সৌন্দর্য কেমন, তা অনুভব করা যায়। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে এখানে যেমন থাকা খাওয়ার সমস্যা রয়েছে, ঠিক তেমনি রয়েছে যাতায়াতের সমস্যা। অনেক কষ্ট করে এসেছি টাঙ্গুয়াতে।

১২ বছর বয়সী তাকবির আহমেদ বলেন, আমি ঢাকা থেকে এসেছি টাঙ্গুয়ার হাওরে। সত্যিই খুব ভালো লাগছে। চারিদিকে পানি আর পানি, তার মধ্যে গাছ। সাতার কেটে ভালো লাগছে আমার।

ময়নসিংহ থেকে আসা রাফি চৌধুরী বলেন, প্রথমবার টাঙ্গুয়ার হাওরে আসলাম। এতদিন শুধু ছবিতেই দেখেছি, আজ বাস্তবে দেখলাম। সত্যিই অনেক ভালো লেগেছে হাওরের এই অপার সৌন্দর্য।

Tangua-3

তিনি বলেন, কবির কথাই সত্যি। ‘সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।’ আমি মুগ্ধ এই হাওরের এসে। কিন্তু হাওরের উন্নয়ন প্রয়োজন। এখানের সড়ক উন্নয়ন ও থাকার মতো ভালো হোটেল হলে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে।

দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, টাঙ্গুয়ার বর্তমান পর্যটকদের একটি প্রিয় স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি ছুটির দিনে এখানে পর্যটকদের মেলা বসে। চারিদিকে মানুষ নৌকা নিয়ে ঘুরছেন, গোসল করছেন এই পরিবেশটাই সবচেয়ে আনন্দের। সামনে ঈদ, আর এই ঈদকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের সংখ্যা আরও বাড়বে। হাওরের উন্নয়নে সরকারের প্রতি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

কীভাবে আসবেন টাঙ্গুয়ার হাওর-

রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন মামুন ও শ্যামলী পরিবহন এবং মহাখালী থেকে এনা পরিবহনের বেশ কয়েকটি ডে-নাইট বাস ছয় ঘণ্টায় সরাসরি সুনামগঞ্জ পৌঁছায়। সেখানে নেমে সুরমা নদীর ওপর আব্দুর জহুর সেতুতেই লেগুনা/সিএনজি অটোরিকশা/মোটরসাইকেলে সহজেই পৌঁছানো যায় তাহিরপুর। এরপর তাহিরপুর ঘাট থেকে আকার এবং সামর্থ অনুযায়ী নৌকা ভাড়া করে ঘোরা যাবে টাঙ্গুয়ার হাওর।

তবে শীতকালে পানি কম থাকে বলে ভ্রমণ পিপাষুদের লেগুনা/ সিএনজি অটোরিকশা/মোটরসাইকেলে যেতে হবে সোলেমানপুর। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে উপভোগ করা যাবে রাশি রাশি নীল জলের টাঙ্গুয়ার হাওরের অপার সৌন্দর্য।

মোসাইদ রাহাত/এমএমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।