মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে মাদক দিয়ে ফাঁসালো কর্মকর্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক খুলনা
প্রকাশিত: ০৮:০০ পিএম, ০১ আগস্ট ২০১৯

জমি দখলকে কেন্দ্র করে খুলনায় এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে লামইয়া আক্তার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা (গেজেট নং-১১৬১) মো. আব্দুল কাদের আকন নগরের লবণচরা এলাকায় বসবাস করেন। একই এলাকার জনৈক নজরুল ইসলামের নিকট থেকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে ২ কাঠা জমি ক্রয় করেন তিনি। তবে ওই জমি নজরুল লিখে না দিয়ে তালবাহানা শুরু করেন। এ ঘটনায় গত ১১ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদেরের স্ত্রী হেলেনা বেগম খুলনার আদালতে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সিআর মামলা করেন (নং-সি/১৮২)। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নজরুল খুলনার মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অসাধু কর্মকর্তাদের দিয়ে গত ২৯ জুলাই (সোমবার) সন্ধ্যায় তার বাড়িতে অভিযানের নামে তাণ্ডব চালান। সে সময় বাড়িতে শুধু আব্দুল কাদেরের স্ত্রী হেলেনা বেগম ও দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে লামইয়া আক্তার উপস্থিত ছিলেন।

পরিবারের অভিযোগ, তল্লাশির নামে তাদের ঘর থেকে ইয়াবা উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগী পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতায় মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে লামইয়া বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা হাওলাদার, সিরাজুল ইসলামসহ ৫/৬ জন আমাদের ঘরে ঢুকে নানাভাবে হেনস্তা করে। ঘরে তল্লাশির নামে অরাজকতা সৃষ্টির একপর্যায়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন লোক তার হাতে থাকা ছোট একটি পোটলা আমাদের জানালার কাছে রাখার চেষ্টা করলে আমি তা দেখে ফেলি। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে আমাকে ধমকানো হয়। এরপর আমার মা হেলেনা বেগমকে নিয়ে তারা চলে যান। পরবর্তীতে জানতে পারি আমার মায়ের নামে লবণচরা থানায় পাঁচ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ মাদক আইনে মামলা দিয়েছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, গত দুইদিন ধরে আমাদের বাড়িতে অজ্ঞাত যুবকরা এসে নানা ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। জমি ছেড়ে না গেলে আমি ও আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকেও মাদক দিয়ে ফাঁসানো হবে বলে তারা হুমকি দিয়েছে। এছাড়া আমাকে এসিড মেরে ঝলসে দেয়াসহ ধরে নিয়ে সম্ভ্রমহানি করার হুমকিও দিচ্ছেন ওই যুবকরা। নিরাপত্তাহীনতায় স্কুলেও যেতে পারছি না।

তবে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাদ্রক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান। তিনি বলেন, ওই নারীর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। যার ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নগর শাখার কমান্ডার অধ্যাপক আলমগীর কবির বলেন, আব্দুল কাদের আকনের পরিবার মাদক ব্যবসার সঙ্গে কখনই জড়িত থাকতে পারে না। এটা পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।

লবণচরা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাইজিদ আকন্দ বলেন, ওই নারীকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লোকেরা গ্রেফতার করেছে। আমরা শুধু মামলাটি রুজু করেছি। এই মামলার তদন্তও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর করবে।

আলমগীর হান্নান/আরএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।