নেশায় ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যথানাশক ট্যাবলেট!
সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর মধ্যে ভারতের খুবই নিকটবর্তী নওগাঁ। এ জেলার সঙ্গে রয়েছে ভারতের ৯টি সীমান্ত। এসব সীমান্ত দিয়ে অবাধে নওগাঁয় প্রবেশ করছে মাদক।
গত ১৮ জুন রাতে জেলার মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর ইউনিয়নের দারিয়াপুর গ্রামে নাসিমা আক্তার সাথী (৪০) নামে এক গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটে। পরে নিহতের মেয়েকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লাশের পাশেই ধর্ষণ করে ঘাতক। এ ঘটনায় ঘাতক সামিউল ইসলাম সাগরকে (২২) গ্রেফতার করে পুলিশ।
অনুসন্ধানে পুলিশ জানতে পারে যৌন উত্তেজক ওষুধ খেয়ে প্রেমিকাকে ধর্ষণ করার উদ্দেশ্যে ওই যুবক সেখানে গিয়েছিলেন। ওই যৌন উত্তেজক সিরাপের সূত্র ধরে গত ২৫ জুন জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ অভিযানে নামে। পরে পাবনা থেকে বাংলাদেশে তৈরিকৃত ওই সিরাপসহ বিভিন্ন কোম্পানির ১৮ হাজার ৪শ যৌন উত্তেজক সিরাপসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, মানুষের রোগ-ব্যাধি নিরাময়ের ওষুধ এখন নেশার কাজে ব্যবহার করছেন মাদক সেবীরা। ‘পেন্টাডল ও টাপেন্টা’ ট্যাবলেট ঘুম ও শরীরের ব্যথা নিরাময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্রে লিখে থাকেন। সীমান্তবর্তী উপজেলা ধামইরহাটের ওষুধের দোকানগুলোতে এ ট্যাবলেট পাওয়া যাচ্ছে। ওই ওষুধের ৫০, ৭৫ ও ১০০ এমজি পাওয়ারের ট্যাবলেটে আসক্ত হচ্ছে মাদকসেবীরা। দোকান থেকে ১৪-১৫ টাকার প্রতিটি ট্যাবলেট ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় কিনে নেশার কাজে ব্যবহার করছে মাদকসেবীরা।
নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান বলেন, কিশোর অপরাধ বেড়ে ওঠার অন্যতম কারণ হচ্ছে পড়াশুনার বাইরেও একটা সমাজ আছে, যেখানে সন্তানদের বেড়ে ওঠা, মানুষের সঙ্গে মিশতে দেয়া ও কথা বলতে দেয়া দরকার। এই কাজটি বর্তমানে অভিভাবকরা করছেন না। পড়াশুনা এবং ভালো ফলাফলের জন্য বাবা-মা তাদের সন্তানদের মানসিক চাপ প্রয়োগ করছেন। এতে সন্তানের মনের ওপর বিতৃষ্ণা চলে আসে। ফলে তারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
অপরাধ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, সন্তান যে ঘরে থাকে সে ঘরটি ভালো করে নজরে রাখা। নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে কিনা তদারকি করা। কাদের সঙ্গে মিশছে তা দেখা। পড়াশুনার বাইরেও নীতি নৈতিকতা, আচার-ব্যবহার শেখানো।
ধামইরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকিরুল ইসলাম বলেন, মাদকসেবীরা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান ও ধড়পাকড় থেকে বাঁচতে ইয়াবা এবং হেরোইনের বিকল্প হিসেবে ওষুধের দোকান থেকে ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওইসব ট্যাবলেট সংগ্রহ করে থাকে। ইতোমধ্যে ওষুধের দোকানগুলোতে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, মাদক নিয়ে নওগাঁ জেলা পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে। মাদক উদ্ধারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়ে থাকে। যদি কোনো পুলিশ সদস্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকে সে ব্যাপারেও পদপেক্ষ গ্রহণ করা হবে।
পত্নীতলা বিজিবি ব্যাটালিয়ন-১৪ এর লে. কর্নেল মো. জাহিদ হাসান বলেন, আমরা সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি মাদক নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রাখছি। মাদকের কোনো তথ্য পেলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী অনেক এলাকায় চলাচলের রাস্তা না থাকায় কিছু প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়। যেখানে রাস্তা নেই মাদক চোরাচালানকারীরা পানির মধ্য দিয়ে মাদক নিয়ে চলে যাচ্ছে। সেখানে আমাদের কিছুই করার থাকে না।
এছাড়া সীমান্তে সন্ধ্যার পর থেকে আলোর স্বল্পতা আছে। এ ব্যাপারে সরকার থেকে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকায় সোলার সিস্টেম লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করার। এতে করে অভিযান কিছুটা ফলপ্রসু হবে বলে মনে করছি।
আব্বাস আলী/এফএ/জেআইএম