সাপাহার সীমান্তে গরু চোরাকারবারিরা বেপরোয়া


প্রকাশিত: ০৭:৩৪ এএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

নওগাঁর সাপাহার সীমান্তে কোরবানিকে সামনে রেখে কথিত হাইকমান্ডের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে ভারত থেকে গবাদিপশু  চোরাচালানকারী একটি মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সীমান্তে হত্যা প্রতিরোধে বিজিবির নির্দেশনা অমান্য করে রাতের বেলা চোরাই পথে বাংলাদেশী রাখাল ভারতে প্রবেশ করছে। আবারো এ সকল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে বাংলাদেশী রাখালের হতাহতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।  

জানা গেছে, সাপাহার উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে গত কয়েক মাসে ভারত থেকে চোরাই পথে গরু মহিষ পাচার করে নিয়ে আসার পথে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নির্যাতনে ৬/৭ জন বাংলাদেশী গরু ব্যবাসায়ী নিহত হয়েছেন। বিশেষ করে উপজেলার হাঁপানিয়া, কলমুডাংগা ও আদাতলা সীমান্তে পর পর ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সীমান্ত এলাকাগুলোতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়া নজরদারি আরোপ করে।

এছাড়া গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সীমান্ত আইন ও বৈধ পন্থায় গবাদি পশু আমদানির বিষয়ে বিজিবির সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিজিবির মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বে নিয়োজিত জোয়ানগণ সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বিজিবির কড়াকড়ি নজরদারির কারণে গরু ব্যবসায়ীরা ভারতীয় সীমান্তের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারায় প্রায় দেড় মাস ধরে উপজেলার হাপানিয়া, কলমুডাংগা, আদাতলা, বামনপাড়া, সুন্দরইল, সোনাডাংগাসহ পার্শ্ববর্তী পত্নীতলার হাটশাওলী, রাধানগর, শীতলমাঠ সীমান্তে গরু মহিষ আমদানি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।

এ সকল সীমান্ত দিয়ে দীর্ঘ দিন গরু মহিষ আমদানি বন্ধ থাকায় পাচারকারী চক্রের পাশাপাশি একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধ কমিশন ভোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে তারা ভারতীয় কতিপয় গডফাদার এর সঙ্গে গোপন বৈঠকে মিলিত হন। ওই চক্রটি চোরাচালানি কাজের জন্য উপজেলার সকল সীমান্তের আন্ডার গ্রাউন্ড ইজারা গ্রহণ করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী জানান, ওই প্রভাবশালী মহল সীমান্ত দিয়ে আমদানিকৃত প্রতি জোড়া গরু মহিষের জন্য ৩ হাজার টাকা কমিশন নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে মোতাবেক প্রতি জোড়ার জন্য আদায়কৃত ৩ হাজার টাকা থেকে তারা করিডোর ফি বাবদ সরকারি কোষাগারে ১ হাজার ৫০ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা কথিত হাইকমান্ডের খরচ দেয়ার অজুহাতে হাতিয়ে নিচ্ছে।

এছাড়াও আমদানিকৃত গরু মহিষ করিডোর ছাড়াই তারা দেশের অভ্যন্তরে পাঠানোর মাধ্যমে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা সরকারকে রাজস্ব না দিয়ে নিজেরা হাতিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার হাপানিয়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে কথিত ওই হাইকমান্ডের নির্দেশ মোতাবেক চোরাপথে স্থানীয় মিরাপাড়া দিঘির হাটের বাসিন্দা মৃত. আত্তাব আলীর ছেলে মানিক মিয়ার নেতৃত্বে শতাধিক রাখাল ভারতের ৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে গিয়ে ৭৮টি গরু ও মহিষ পাচার করে এনে হাপানিয়া বিজিবি ক্যাম্পের সামনে বেঁধে রাখেন। অবৈধভাবে নিয়ে আসা ওই গরু মহিষের জন্য তারা বিজিবির কাছ থেকে করিডোর টোকেন ইস্যুর জন্য চাপ প্রয়োগ করে।

এ দিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না আসায় স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পের পক্ষ থেকে ওই গরু মহিষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়।

সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার বাইরে হঠাৎ করে কিভাবে চোরাই পথে এ বিপুল সংখ্যাক গবাদি পশু নিয়ে আসা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে হাপানিয়া বিজিবির ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার সিরাজ কিছুই জানেন না বলে জানান। এ ঘটনায় সকাল থেকে ব্যবসায়ী ও রাখালদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে ওই ৭৮টি গবাদি পশুর করিডোর করার জন্য হাপানিয়া বিজিবি ক্যাম্পের পক্ষ থেকে করিডোর টোকেন ইস্যু করা হয়।

সাপাহার উপজেলার সকল সীমান্তে এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে আবারো সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশী রাখালের হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে।

এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।