জামিন চাইলেন মিন্নি, বিচারককে ভিডিও দেখালেন ওসি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
প্রকাশিত: ০৫:১৬ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৯

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি বনে যাওয়া রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন আবারও নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে জামিন চাওয়ায় আদালতের বিচারককে মিন্নির মোবাইল কললিস্ট ও ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন > ‘রাতে ঘুমাতে পারে না মিন্নি’
আদালত সূত্রে জানা যায়, আদালতের বিচারককে দেখানো মিন্নির ওই মোবাইল কললিস্টে রিফাত হত্যায় জড়িতদের সঙ্গে কথোপকথনের প্রমাণ রয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজসহ আরও কিছু ভিডিও আদালতকে দেখানো হয়, যেটি প্রমাণ করে এ ঘটনায় মিন্নির সম্পৃক্ততা রয়েছে। পরে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন বিচারক।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, রিফাত হত্যাকাণ্ডের আগে এবং পরে নিহত নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির যে যোগাযোগ হয়েছে তাতে বোঝা যায় এ ঘটনায় মিন্নির সম্পৃক্ততা আছে। তবে এটি তাদের স্বাভাবিক যোগাযোগও হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
এর আগে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে মিন্নির জামিনের শুনানির সময় ওসি হুমায়ুন কবিরকে আদালতে তলব করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান। ওই সময় আদালতের বিচারককে মিন্নির মোবাইল কললিস্ট ও ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন > ফের মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর
বেলা ১১টায় পূর্বনির্ধারিত তারিখে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিন শুনানি শুরু হয়। প্রথমে শুনানি শুরু করেন মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অন্তত ২০ জন আইনজীবী। আসলামসহ মিন্নির পক্ষে উপস্থিত থাকা অন্য আইনজীবীরা এক ঘণ্টা শুনানি করে মিন্নির জামিন দেয়ার বিষয়ে নানা যুক্তি আদালতে উপস্থাপন করেন।
এরপর বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাডভোকেট ভূবন চন্দ্র হালদারসহ অন্তত ৪০ জন আইনজীবী মিন্নির জামিনের বিরোধিতা করে নানা যুক্তি তুলে ধরে একঘণ্টা শুনানি করেন।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে মিন্নির আইনজীবী মো. মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, দীর্ঘ তিন ঘণ্টারও বেশি সময় আদালতে মিন্নির জামিন শুনানি হয়েছে। আদালত বাদী এবং আসামি উভয়পক্ষের সব আইনজীবীর বক্তব্য শুনেছেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপন করা তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন বিচারক। পরে সব তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হয়। এরপর মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত।
তিনি আরও বলেন, আদালতের বিচারক সব আইনজীবীর বক্তব্য মনোযোগসহকারে শোনায় আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি। আদালতের আদেশ বের হলে মিন্নির বাবার সঙ্গে কথা বলে উচ্চ আদালতে আবারও মিন্নির জামিনের আবেদন করব।
এ বিষয়ে বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবিলক প্রসিকিউটর ভূবন চন্দ্র হালদার বলেন, রিফাত হত্যা মামলায় মিন্নির যে ভূমিকা ছিল তা আমরা আদালতে তুলে ধরেছি। একপর্যায়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন আদালত। পরে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে হাজির হয়ে মিন্নির মোবাইল কল লিস্ট এবং বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ বিচারকের কাছে উপস্থাপন করেন। বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি তর্কে সন্তুষ্ট হয়ে মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেন বিচারক।
বিজ্ঞাপন
গত ২২ জুলাই বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথমবার মিন্নির জামিনের আবেদন করেন অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। পরে ওইদিনই শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এরপর গত ২৩ জুলাই মিস কেস দাখিল করে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামানের আদালতে ফের জামিনের আবেদন করেন মিন্নির অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। পরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নথি তলব করে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) এ জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত।
গত ১৬ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরসহ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
১৭ জুলাই বুধবার বিকেল ৩টার দিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নিকে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।
পরদিন বৃহস্পতিবার বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানান, মঙ্গলবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ ও বুধবার রিমান্ড মঞ্জুরের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। এরপর শুক্রবার বিকেলে মিন্নি একই আদালতে তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
২২ জুলাই মিন্নির জামিনের জন্য বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন তার আইনজীবী মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। পরে শুনানি শেষে প্রথম দফায় মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।
বিজ্ঞাপন
আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে মিন্নিসহ ১৫ জন অভিযুক্তই রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এছাড়া এ মামলার এজাহারভুক্ত চার আসামি এখনো পলাতক।
মিরাজ/এএম/জেআইএম