ব্যতিক্রমী এক বাজার বর্ডার হাট
ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক পুরনো। আর সেই পুরনো সম্পর্ক ঠিক রাখতে সুনামগঞ্জের সীমান্তে বসে বর্ডার হাট। সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ডলুরা সীমান্তে বসে এই বর্ডার হাট। ভারতীয় পণ্যের পাশাপাশি থাকে বাংলাদেশি পণ্যের কদর। এই মেলাকে এগিয়ে নিতে চান দু’দেশের সাধারণ মানুষ। প্রতি মঙ্গলবার বসে এই হাট।
জানা যায়, ২০১০ সালের মে মাস থেকে এ হাটে আনুষ্ঠানিক বেচা-কেনা শুরু হয়। কিন্তু হাটে সাধারণ মানুষ পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারেন না। দুই দেশের সীমান্ত থেকে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যাদের বসবাস তাদেরই মূলত সীমান্ত হাটে পণ্য বিক্রয়ের অনুমতি দেয়া হয়। প্রতি ব্যবসায়ীকে একটি করে কার্ড দেয়া হয়। তারা এই কার্ডের মাধ্যমে দুইশ ডলার পর্যন্ত পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। বাজারে মানুষের আনাগোনাতেও রয়েছে কড়াকড়ি। যে কেউ বাজারে আসতে পারবেন না।
বাজারে রয়েছে বিভিন্ন রকমের পণ্য। বাংলাদেশিদের চাহিদায় থাকে ভারতীয় জুতা, গরম মশলা ও বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক্স পণ্য। অপরদিকে ভারতীয়দের কাছে বাংলাদেশের বিভিন্ন রকমের প্লাস্টিক পণ্য, ড্রিংকস ও চিপস বেশ জনপ্রিয়।
বাজারে ভারতীদের মধ্যে খাসিয়া, মাইনাজা, গারো ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক আসেন বেশি। তারা তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলেন। তবে সামান্য ইংরেজি ও হিন্দি সংমিশ্রণে কথা বলে বাজার থেকে পণ্য ক্রয় করেন। বাজারের মাঝখানে একটি ঘর রয়েছে। সেই ঘরের দুই পাশে বসে বাজার।
সরেজমিনে নারায়ণতলা বাজার ঘুরে কথা হয় ভারতের গোয়াটি এলাকার বাসিন্দা করন্তি মমনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশে এসে বাজার করি, সেটা সত্যিই আমাদের খুব ভালো লাগে। ভারতে বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা অনেক। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যদি পণ্যের সংখ্যা আরও বাড়ান তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়।
ভারতীয় ব্যবসায়ী রাম কৃষ্ণ বলেন, আমি শিলং থেকে বর্ডার বাজারে এসেছি ব্যবসা করতে। বাংলাদেশের মানুষ খুব ভালো ও মিশুক।
বাংলাদেশ সীমান্তের বাসিন্দা মিরাজ আলী বলেন, প্রতি মঙ্গলবার আমরা দু’দেশের মানুষ এক হই। আমাদের মধ্যে পণ্যের আদান-প্রদান হয়। এটি আমাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে কাজ করে।
বাংলাদেশি সবজি বিক্রেতা খলিলুল্লাহ বলেন, নিজের খেতের সবজি বাজারে এনে বিক্রি করি। বিএসএফ সদস্যরা আমাদের প্রধান ক্রেতা।
নিরাপত্তা বিষয়ে বাংলাদেশের বিজিবির বিওপি কামান্ডার মো. এমদাদুল হক বলেন, এখানে নিরাপত্তার বিষয়ে কড়া নজর রাখতে হয়। অবৈধ ব্যবসা করার কোনো সুযোগ নেই এখানে। আমাদের এখানে ক্রেতাদেরও তালিকা রাখা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসএফের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা সব সময় বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করি। বাংলাদেশের মানুষ খুব ভালো। এখানকার পণ্য শিলং, গোয়াটিসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় যায়। আমরা সত্যিই খুব খুশি বাংলাদেশিদের সঙ্গে কাজ করে।
মোসাইদ রাহাত/এফএ/পিআর