নওগাঁয় প্রস্তুত ৩ লাখ কোরবানির পশু

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৮:৪২ এএম, ২৯ জুলাই ২০১৯

নওগাঁয় পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানিযোগ্য তিন লাখ গবাদিপশুর প্রতিপালন করেছেন খামারিরা। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার ১১টি উপজেলায় ৩২ হাজার ২৪২টি খামারে প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ১১৫টি কোরবানির পশু প্রতিপালন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ হাজার ৬০৭টি ষাঁড়, ২২ হাজার ৭৯টি বলদ, ৬৬ হাজার ৩৮টি গাভী, ৩ হাজার ৩৫২টি মহিষ, ৯৩ হাজার ৬৮৪টি ছাগল, ২৫ হাজার ২৩টি ভেড়া এবং ৩৩২টি অন্যান্য পশু।

প্রাকৃতিক খাবার ও ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রক্রিয়া ছাড়াই এসব পশু লালন-পালন করেছেন খামারিরা। বিগত বছরগুলোতে বন্যার কারণে খামারিরা তেমন লাভবান হতে পারেননি। এ বছরও ভারত থেকে পশু আসার শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা। যদি ঈদের বাজারে ভারত থেকে গরু আসে তাহলে খামারিদের লোকসানে পড়তে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ভারত থেকে যেন গরু না আসে সে ব্যাপারে সরকারের নজরদারি বাড়ানো দাবিও করেছেন খামারিরা।

খামারিরা জানান, কোনো রকম ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রক্রিয়া ছাড়াই প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে পারিবারিকভাবে পশু প্রতিপালন করেছেন তারা। ক্ষতিকর ট্যাবলেট, ডেক্সামেটাসন বড়ি না দিয়ে কোরবানি উপলক্ষে পুষ্টিকর প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করছেন। প্রাকৃতিক ঘাসের পাশাপাশি দেয়া হচ্ছে প্রাকৃতিক খাবার খৈল, ভূষি, ব্যান্ড গুড়া, চাউলের খুদ ও খড়। পশু পরিচর্যার শেষ মুহূর্তে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

কোরবানি উপলক্ষে ষাঁড়ের প্রতি বিশেষ করে দেশি জাতের ষাঁড়ের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হয়। একই সঙ্গে গাভী, বলদ ও মহিষ চাহিদা মোতাবেক পালন করা হয়। এছাড়া উন্নত জাতের শাহিয়াল, সিন্ধি ও জার্সি গরু পালন করা হয়। খামারের পাশাপাশি পারিবারিকভাবেও গরু, ছাগল ভেড়া ও গাড়ল পালন করা হয়। আর এসব কোরবানির পশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

Naogaon-Cow

সদর উপজেলার মেসার্স সখিনা ডেইরি ফার্মের প্রোপাইটার আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এ বছর কোরবানি উপলক্ষে দেশীয় জাতের ১২টি ষাঁড় পালন করেছিলাম। সাড়ে তিন মাস পালন করে কয়েকদিন আগে বাজারে বিক্রি করেছি। কারণ ঈদের সপ্তাহে গরুর বাজার কমে যায়। প্রতিটি গরুতে ১০-১২ হাজার টাকা করে লাভ এসেছে।

রানীনগর উপজেলার ‘পল্লীশ্রী কৃষি প্রদর্শনী সমন্বিত খামার’ এর পরিচালক মাসুদুর রহমান রনি বলেন, খামারে ৩০টি গরু, ২৫টি ছাগল ও ৩৫টি ভেড়া রয়েছে। নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনের মাধ্যমেই এই খামারের গরু মোটাতাজা করা হয়। কোনো প্রকার ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করায় আমাদের খামারের গরু, ছাগল ও ভেড়ার স্থানীয় বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকে।

বদলগাছী উপজেলার ভান্ডারপুর গ্রামের খামারি যুবক আসলাম হোসেন জানান, গত তিন বছর থেকে তিনি গরু পালন করছেন। এ বছর তার খামারে বিভিন্ন জাতের ২২টি গরু আছে। এবার ঈদে বাজারজাত করার জন্য ১৬টি গরু লালন-পালন করেছেন। এর মধ্যে ১টি ষাঁড় ও বাকিগুলো বকনা। ৫ মাস আগে বাজারে গরুর দাম বেশি থাকায় খামারে গরু উঠাতে পারিনি। কারণ বেশি দামে গরু কিনে পালন করা সম্ভব না। কেনার পর লালন-পালন করে যদি বেঁচার সময় সামঞ্জস্য না থাকে তাহলে লোকসান গুনতে হবে। তবে সঠিকভাবে পরিচালনা করা গেলে লাভ থাকে। আর ভারত থেকে যদি গরু আসা শুরু হয় তাহলে আমার মতো ছোট খামারিদের লোকসান গুনতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের নজরদারী বাড়ানো দাবি করেন তিনি।

নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উত্তম কুমার দাস বলেন, খামারিরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং ভেজালমুক্ত খাবার দিয়ে পশু লালন-পালন করেছেন। কোনো ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান পশুকে দেয়া হয় না। জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ১১৩টি। অবশিষ্ট পশু দেশের অন্য জেলার চাহিদা পূরণে সরবরাহ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, গত বছর খামারিরা যেমন লাভ করতে পেরেছে। এ বছরও যদি দেশের বাইরে থেকে পশু না আসে তাহলে এবারও তারা লাভবান হবেন।

আব্বাস আলী/এমবিআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।