চুয়াডাঙ্গায় আবিরকে গলা কেটে হত্যার আগে বলাৎকার করা হয়

সালাউদ্দীন কাজল
সালাউদ্দীন কাজল সালাউদ্দীন কাজল চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: ০৯:৪৪ এএম, ২৫ জুলাই ২০১৯

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামে মাদরাসাছাত্র আবির হুসাইনকে (১১) বলাৎকারের পর মাথা কেটে হত্যা করা হয়। আবির কয়রাডাঙ্গা গ্রামের নুরানী হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।

বুধবার সকালে গ্রামের একটি আমবাগান থেকে তার মরদেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার পর জেলা পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম অনুসন্ধানে মাঠে নামে। দিনভর অনুসন্ধানের পর বুধবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান।

তিনি বলেন, মাদরাসাছাত্র হত্যার নেপথ্যে আমরা বেশ কিছু তথ্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছি। সাম্প্রতিক গুজবের সঙ্গে এ হত্যার কোনো সম্পর্ক নেই। সুকৌশলে হত্যার ঘটনাটি ভিন্নখাতে দিতেই নিহত ওই ছাত্রের মাথা কেটে গুম করা হয়েছে।

তিনি জানান, প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, নিহত ওই ছাত্রের ওপর দীর্ঘদিন ধরে যৌন নির্যাতন চালানো হচ্ছিল। যৌন নির্যাতনের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতেই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় তাকে। ময়নাতদন্তে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। এ ঘটনার পর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মাদরাসার পাঁচ শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। আটকদের হাতের ছাপ সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে ওই মাদরাসাটিতে অধ্যায়নরত রয়েছে প্রায় ৭১ জন শিক্ষার্থী। চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে অধ্যায়নরত আছে বেশ কিছু ছাত্র।

মাদরাসার মুহতামিম মুফতি আবু হানিফ জানান, ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আবির হুসাইন প্রায় এক বছর আগে এই মাদরাসায় ভর্তি হয়। মঙ্গলবার এশার নামাজের একটু আগে আবির হুসাইন নিখোঁজ হয়। সকালে গ্রামবাসী মাদরাসার অদূরে একটি আমবাগানে আবিরের মাথাবিহীন মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে।

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান মুন্সি জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান (বার), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কানাই লাল সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠাতে গেলে উত্তেজিত হয়ে ওঠে গ্রামবাসী। তারা আবিরের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

পরে পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান গ্রামবাসীদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে গ্রামবাসীকে শান্ত থাকারও অনুরোধ জানানো হয়। আশ্বাস দেয়া হয় ঘাতকের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ জানান, দিনভর পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট কাজ করার পর আমাদের হাতে কিছু তথ্য আসে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়। এরই মধ্যে হাসপাতাল থেকে তথ্য পাওয়া যায় নিহত মাদরাসাছাত্র আবির হাসানের মলদ্বারে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এরপর হাসপাতালে ছুটে যান জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানসহ তদন্তকারী দলগুলো।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের বর্ণনা দিয়ে মো. কলিমুল্লা বলেন, ওই ছাত্রের ওপর দীর্ঘদিন ধরে যৌন নির্যাতন চালানো হচ্ছিল। নির্যাতনের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।

এদিকে বুধবার বিকেলে র‌্যাবের সদর দফতর থেকে হেলিকপ্টারযোগে ডগস্কোয়াড নিয়ে একটি বিশেষ দল চুয়াডাঙ্গায় যায়। টিমের সদস্যরা সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ঘটনাস্থলসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার অনুসন্ধান চালিয়েও আবিরের মাথা উদ্ধারে ব্যর্থ হন।

দলটির ইনচার্জ ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা মাসুদ আলম। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে গুজবের সঙ্গে এই হত্যার সম্পর্ক নেই। মাদরাসাছাত্র আবির হুসাইনকে হত্যার পর কৌশলে গুজবে রূপ দিতে কাজ করেছে হত্যাকারীরা। আমরা র‌্যাবের পক্ষ থেকে চুয়াডাঙ্গা পুলিশকে সহায়তা করব।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।