আবু বক্কর নামের প্রধান শিক্ষক রাজনীতি করেন ফারুক নামে
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু সরকারি এ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বরিশাল হিজলা উপজেলার পশ্চিম চর বাউশিয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক খানের বিরুদ্ধে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে নিজের পরিচয় আড়াল করতে কর্মক্ষেত্রে ও রাজনীতিতে ভিন্ন নাম ব্যবহার করেছেন আবু বক্কর সিদ্দিক খান।
স্থানীয়রা জানান, বরিশাল হিজলা উপজেলার পশ্চিম চর বাউশিয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক খানের জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম উল্লেখ করা হয়েছে আবু বক্কর সিদ্দিক খান। তবে এলাকাবাসীর কাছে তিনি ‘ফারুক খান’ নামে পরিচিত। তিনি কর্মক্ষেত্রে আবু বক্কর সিদ্দিক খান নাম ব্যবহার করলেও বিএনপির রাজনৈতিক নেতাদের কাছে পরিচিত ফারুক খান নামে।
স্থানীয়রা আরও জানান, আবু বক্কর সিদ্দিক খান ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা ছিলেন। ছাত্রজীবন শেষে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সহছাত্র বিষয়ক সম্পাদক। এছাড়া গত মাসে আবু বক্কর সিদ্দিক খান ওরফে ফারুক খানকে আহ্বায়ক করে বরিশাল উত্তর জেলা মৎসজীবী দলের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
স্থানীয়রা জানান, আবু বক্কর সিদ্দিক খানের বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত থাকার বিষয়টি ধোঁয়াশাচ্ছন্ন থাকলেও কমিটি ঘোষণা এমনকি সেই কমিটির কাগজ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে গ্রহণ করার ছবি ফেসবুকে প্রকাশ হলে বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
আবু বক্কর সিদ্দিক খানের টেকের বাজার সংলগ্ন বাসায় বিএনপি নেতাকর্মীদের আনাগোনা লেগেই থাকে। মাঝে মধ্যেই ওই বাসায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক হয়। এ কারণে অনেক দিন স্কুলেও যতে পারেন না তিনি।
হিজলা উপজেলার পশ্চিম চর বাউশিয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, স্কুল চালকালীন প্রধান শিক্ষক মাঝে মধ্যে কোথায় যেন যান। দীর্ঘক্ষণ পর ফিরে আসেন। অনেকদিন আবার ফেরেন না। এ কারণে দাফতরিক কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে।
বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ফারুক খান ছাত্রজীবন থেকে দল করে আসছেন। তিনি দলের জন্য অনেক করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। দলের প্রতি তার অবদান রয়েছে।
ফারুক খানের পেশার কথা জানতে চাইলে বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, তিনি শিক্ষকতা পেশায় আছেন।
তবে এ বিষয়ে আবু বক্কর সিদ্দিক খান বলেন, আমি কোনো স্কুলে চাকরি করি না। আপনি প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এরপরই ফোন কেটে দেন তিনি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের পর তাকে আবার ফোন করা হলে আবু বক্কর সিদ্দিক খান বলেন, ভাই আমি শিক্ষক না। এ ধরনের খবর প্রকাশ না করার অনুরোধও করেন তিনি।
এ বিষয়ে হিজলা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল গফ্ফার বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের সরাসরি রাজনীতি করার কোনো বিধান নেই। আবু বক্কর সিদ্দিক খান নামে একজন প্রধান শিক্ষক আছেন যার বাসা উপজেলার টেকের বাজারে। বিষয়টিতে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বরিশাল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লতিফ মজুমদার বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও যদি কোনো শিক্ষক দলীয় পদ পদবি নিয়ে রাজনীতি করে তবে সেটা গুরুতর অপরাধ।
সাইফ আমীন/এফএ/এমকেএইচ