সার্জেন্ট কিবরিয়া হত্যা : কাভার্ডভ্যান চালক রিমান্ডে
ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়াকে চাপা দেয়া যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যান চালক মো. জলিল মিয়ার একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার বেলা ২টার দিকে শুনানি শেষে বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. শামীম আহম্মেদ জলিল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর থানা পুলিশের এসআই আব্দুল মালেক একই আদালতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জলিল মিয়ার সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত তখন রিমান্ড আবেদনটি গ্রহণ করে আসামির উপস্থিতিতে রোববার রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছিলেন।
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জেনারেল রেজিস্ট্রার অফিসার (জিআরও বন্দর থানা) এসআই মিলি খানম বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল মালেক মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করে রিমান্ড আবেদন করেছিলেন। রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়াকে চাপা দেয়ার ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন, ঘটনার সঙ্গে আরও কোনো ব্যক্তি জড়িত আছে কিনা, চালক জলিল মিয়া সংকেত অমান্য করে সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়াকে চাপা দিয়ে পালানোর পেছনে কি কারণ ছিল- তা জানতে জলিল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা আবশ্যক। এসব কারণ উল্লেখ করে তার সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে আদালত জলিল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া জলিল মিয়া (৫০) টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌরসভার পুস্তকামারি এলাকার মৃত আফাজ উদ্দিন সিকদারের ছেলে।
গত সোমবার সকাল থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের কর্নকাঠি জিরো পয়েন্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পটুয়াখালীগামী যমুনা গ্রুপের বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ডভ্যানকে (ঢাকা-মেট্রো-উ-১২-২০৫৪) থামার সংকেত দেন সার্জেন্ট কিবরিয়া। কাভার্ডভ্যানটি সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সার্জেন্ট কিবরিয়া একটি মোটরসাইকেলে ধাওয়া করে কাভার্ডভ্যানটির সামনে গিয়ে ফের তাকে থামার সংকেত দেন।
তখন কাভার্ডভ্যানচালক জলিল মিয়া মোটরসাইকেল আরোহী সার্জেন্ট কিবরিয়াকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠির নলছিটি থানা পুলিশ ধাওয়া করে চালক জলিল মিয়াসহ কাভার্ডভ্যানটি আটক করে।
কিবরিয়ার অবস্থার অবনতি হওয়ায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সেদিন বিকেল সোয়া ৫টার দিকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কিবরিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পরপরই তাকে জরুরি বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
নিহত সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া প্রায় সাড়ে ৪ বছর ধরে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী ইউনিয়নে। তার বাবা ইউনুস সরদার সুবিদখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
গত সোমবার রাতে কাভার্ডভ্যান চালক মো. জলিল মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করা হয়। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বন্দর থানায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয় বন্দর থানার এসআই আব্দুস সবুরকে। একদিনের মাথায় তাকে পরিবর্তন করে এসআই আব্দুল মালেককে তদন্তভার দেয়া হয়।
সাইফ আমীন/এএম/পিআর