কুড়িগ্রামে বন্যায় ৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, ১৫ জনের মৃত্যু
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৫:৪৫ পিএম, ১৯ জুলাই ২০১৯
কুড়িগ্রামে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। সেই সঙ্গে বেড়েছে দুর্ভোগ। এখনো ঘরে ফিরতে পারছে না বন্যা দুর্গতরা। গত ১০ দিনে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। বানভাসিদের জন্য অপ্রতুল ত্রাণের কারণে হাহাকার দেখা দিয়েছে। বিশাল এলাকা জুড়ে বন্যা হওয়ায় জনপ্রতিনিধিরা পড়েছেন চরম বিপাকে। তারা বন্যাকবলিত সবার কাছে পৌঁছাতে পারেননি।
এ অবস্থায় আগামীকাল শনিবার কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি দেখতে দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে আসছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এমপি।
এদিকে শুক্রবার সকালে বন্যার পানিতে পরে সীমা খাতুন নামে দেড় বছরের একটি শিশু মারা গেছে। সে উলিপুর পৌরসভার খাওনারদরগা গ্রামের ভাটিয়াপাড়ার সাদেক মিয়ার কন্যা। ৮নং ওয়ার্ডের পৌর কমিশনার সোহরাব হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এনিয়ে গত ১০ দিনে পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ জনে।
জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, বন্যার ফলে ৫৭টি ইউনিয়নের ৮৯৪টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে প্রায় দুই লাখ পরিবারের ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে প্রায় দুই লাখ। ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর। বন্যায় ৫শ কিলোমিটার রাস্তা, ৪০ কিলোমিটার বাঁধ ও ৪১টি ব্রিজ/কার্লভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬৪ হাজার মানুষ ১৮৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪টি।
শুক্রবার সকাল থেকে হু হু করে নেমে যাচ্ছিল বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। এর মধ্যে ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে ১০৯ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে ৮৩ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীল পানি ব্রিজ পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা দুর্গতদের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। ৫টি ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও স্যালাইন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে বলে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন।
বন্যা দুর্গতদের সহযোগিতায় প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ সামর্থ অনুযায়ী ত্রাণ বিতরণ করছেন। বেসরকারি এনজিওগুলো এখনো হাত গুটিয়ে বসে আছে। ডোনার সহায়তা না করায় তারা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।
অপরদিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকে এগিয়ে আসলেও তা একেবারেই নগণ্য। ফলে বানভাসিদের মধ্যে ত্রাণের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান জানান, বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে ৮০০ মেট্রিক টন জিআর চাল, ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৬ হাজার ৪২৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
নাজমুল হোসাইন/আরএআর/এমএস