রাতারগুলে বন ধ্বংস করছে বনবিভাগ!


প্রকাশিত: ০৩:৩৯ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

দেশের একমাত্র জলারবন ‘রাতারগুল’ বাঁচাতে সরকারকে যুগোপযোগী বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দিলেন পরিবেশবিদ ও বিশিষ্টজনরা। রাতারগুল বন রক্ষার নামে বনবিভাগের বন ধ্বংসকারী বিভিন্ন প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানান তারা। শনিবার দুপুরে সিলেটের রাতারগুল গ্রামসংলগ্ন রাতারগুল জলারবন পরিদর্শন শেষে আয়োজিত নৌ-সমাবেশে বক্তারা এ দাবি জানান।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর আয়োজনে এবং ভূমিসন্তান বাংলাদেশ ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ব্যতিক্রমি এ নৌ-সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

রাতারগুল বন সংলগ্ন জলাভূমিতে আয়োজিত এ নৌ-সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, রাতারগুল সম্পর্কে আমরা অনেক শুনেছি, আজ নিজ চোখে দেখলাম। রাতারগুলে বনবিরোধী কর্মকাণ্ড দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি। অবিলম্বে রাতারগুলকে সংরক্ষণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠার নামে বন বিভাগ রাতারগুল ধ্বংস করার পায়তারা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত না নিয়ে বন বিভাগের এমন কাজের কঠোর সমালেচনা করেন তিনি।

বাপার সহসভাপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে ও বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় নৌ-সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, মানবাধিকার ও পরিবেশ কর্মী খুশি কবীর, বেলার নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগের প্রধান ড. নারায়ণ সাহা, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. নাজিয়া চৌধুরী।

আরও বক্তব্য রাখেন, বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, গোয়াইনঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম, ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবীর, বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন সোহেল, সিলেটের সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরাসহ স্থানীয় এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন বলেন, এই সফর শেষে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে রাতারগুল রক্ষায় করণীয় নির্ধারণ করে একটি প্রতিবেদন সরকারের কাছে প্রস্তাব করা হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, রাতারগুলে আমি এর আগেও এসেছি। আগে এখানে অনেক বন্যপ্রাণি দেখা গেলেও আজকে কোনো বন্যপ্রানির চিহ্ন দেখা যায়নি। এখানে সংরক্ষণের নামে বনবিভাগ নির্মিত ওয়াচ টাওয়ার এই বনের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও দৃষ্টিকটু। এখানে অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও সংরক্ষণের নামে যা করা হচ্ছে, তা এই বনের ধ্বংসকে তরান্বিত করেছে। রাতারগুলকে শিক্ষা ও গবেষণার প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে।

সুলতানা কামাল বলেন, দেশের একমাত্র জলারবন রাতারগুলকে রক্ষায় সবার আগে স্থানীয়দের সচেতন হতে হবে। এটা আমাদের সম্পদ, এটাকে রক্ষা করাও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই নৈতিক দায়িত্ব পালনে আমরা ব্যর্থ হলে আমাদের আমাদের নৈতিক পরাজয় হবে।  

শরীফ জামিল, ২০১২ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত রাতারগুল সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকাণ্ড সমাবেশে তুলে ধরে বলেন, পরিবেশবাদী ব্যক্তি ও সংগঠনের পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণ ও সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানের সমন্বয়ে একটি সুচিন্তিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটি সংরক্ষণ প্রয়োজন।

ছামির মাহমুদ/এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।