জমির জন্য ভাতিজাকে মেরে ফেললেন বিজিবি সদস্য

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি হবিগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৪:১৯ পিএম, ১৭ জুলাই ২০১৯

হবিগঞ্জে এক খণ্ড জমির জন্য ভাতিজা দুলাল মিয়াকে খুন করে নদীতে মরদেহ ফেলে দেন বিজিবি সদস্য চাচা সাদেক মিয়া। পরে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে বেওয়ারিশ হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করে। কিন্তু এক কিশোরের তোলা মাইক্রোবাসের ছবির ওপর ভিত্তি করে হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন করল পুলিশ।

এ ঘটনায় ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তারা হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। আর অপর দুই পেশাদার খুনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নজরদারিতে রাখা হয়েছে বিজিবি সদস্য সাদেক মিয়াকে।

বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা।

আসামিদের দেয়া স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে তিনি জানান, চুনারুঘাট উপজেলার পাট্টাশরিফ গ্রামের দুলাল মিয়া তার চাচা বিজিবি সদস্য সাদেক মিয়ার বাড়ির সামনের ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। জমিটির ওপর সাদেক মিয়ার লোভ ছিল। জমিটি পেতে তিনি ভাতিজার বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমাও করেন। শেষ পর্যন্ত কোনো ফল না পেয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ঢাকায় তার পরিচিত কিলারদের সঙ্গে কথা বলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৭ জুন একটি মাইক্রোবাসযোগে কিলারদের চুনারুঘাটের পাট্টাশরিফ গ্রামে পাঠানো হয়। সেখানে তাদের সহযোগিতা করে সাদেক মিয়ার ভাগনে আফরাজ মিয়া।

ঘটনার সময় দুলা মিয়া একটি টমটমযোগে (ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক) স্থানীয় শাকির মোহাম্মদ বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে আসামিরা তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করে নেয়। এ সময় গ্রামে মাইক্রোবাস দেখে এক কিশোর গাড়িটির ছবি তুলে। পথে দুলা মিয়া পানি পান করতে চাইলে তাতে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে খাইয়ে দেয়া হয়। পরে ঢাকার হাজারীবাগে সিকদার মেডিকেলের পেছনে নিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে হত্যার পর মরদেহ বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয় তারা। ১৮ জুন নদীতে মরদেহ পড়ে আছে খবর পেয়ে হাজারীবাগ থানা পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। পরিচয় না পেয়ে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দুলাল মিয়াকে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় হাজারীবাগ থানায় পুলিশ একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এর আগে ১৯ জুন নিহত দুলাল মিয়ার ছোট ভাই ইদু মিয়া বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে চুনারুঘাট থানায় অপহরণ মামলা করেন। নিহত দুলাল মিয়া ৫ মেয়ের জনক।

পুলিশ সুপার আরও জানান, অপহরণ মামলাটির খবর নেয়ার পর নিহতের পরিবারের অবস্থা জেনে বিষয়টি তাকে বেশ পীড়া দিয়েছে। কোনো ক্লু না পেয়ে মানসিকভাবে বেশ অশান্তিতেও ছিলেন। তিনি তদন্তটি সম্পূর্ণ নিজে তত্ত্বাবধান করেন। অবশেষে ওই গ্রামের এক কিশোরের তোলা গাড়ির ছবির বিষয়টি জানতে পারেন। তার কাছ থেকে ছবি নিয়ে মহাসড়কে বিভিন্ন টোল প্লাজার সিসি টিভির ফোটেজ সংগ্রহ করা হয়। ভৈরব সেতুর সিসি টিভির ফুটেজে পাওয়া একটি গাড়ির সঙ্গে ছবির গাড়িটির মিল পাওয়া যায়। সে সূত্র ধরে মাইক্রোবাসের চালক ভোলা জেলার লালমোহন থানার টিটিয়া গ্রামের ইউসুফ সরদারকে ১৪ জুলাই ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকার রায়ের বাজার থেকে গ্রেফতার করা হয় কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার টামনিকোনাপাড়া গ্রামের মামুন মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।

তারা উভয়েই ১৫ জুলাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ১৬ জুলাই গ্রেফতার করা হয় ভাড়াটিয়া খুনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন ও বরিশালের গৌরনদী উপজেলার গৌরবর্ধন গ্রামের শামীম সরদারকে। এর আগে ৩০ জুন সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিল অহরণের অন্যতম সহযোগী সাদেক মিয়ার ভাগনে আফরাজ মিয়াকে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা আরও জানান, সাদেক মিয়া ৫১ বিজিবিতে কর্মরত আছেন। তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যে কোনো সময় গ্রেফতার করা হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে এ ঘটনায় আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/আরএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।