গাইবান্ধায় ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৩:০১ পিএম, ১৭ জুলাই ২০১৯
টানা বৃষ্টিপাত, উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল এবং একের পর এক বাঁধ ধসের কারণে গাইবান্ধার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বুধবার সকালে ভরতখালি ইউনিয়নের পোড়াগ্রাম এলাকায় ১০০ মিটার বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সেখানে গাইবান্ধা–সাঘাটা আঞ্চলিক মহাসড়ক তলিয়ে গেছে।
তীব্র গতিতে পানি প্রবেশ করে নতুনভাবে বন্যা কবলিত হচ্ছে বোনারপাড়া, পদুমশহর, ভরতখালি ও কচুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম। পানির তোড়ে সান্তাহার-লালমনিরহাট-রংপুর রেলপথের বাদিয়াখালি অংশ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এই রুটে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে বন্যার পানিতে বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলার সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গাইবান্ধা-সাঘাটা ও গাইবান্ধা-সাদুল্লাপুর মহাসড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে ফুলছড়ির তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ১৪৩ সেন্টিমিটার এবং শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ঘাঘট নদীর পানি ৮৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
অপরদিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
২১ বছরের রেকর্ড ভেঙে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ১৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলার বন্যাকবলিত ছয় উপজেলার ৩০০ গ্রামের প্রায় ৪ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকার অনেক মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি, গবাদি পশু-পাখি নিয়ে আশেপাশের উঁচু স্থান ও আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। পানির তীব্র স্রোতে ঘাঘট রক্ষা বাঁধসহ পাউবোর বেড়িবাঁধগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে ধস দেখা দিয়েছে। ফলে জেলার ফুলছড়ি, সাঘাটা, সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন সব চেয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন গবাদিপশু নিয়ে। এলাকায় গবাদিপশু রাখার স্থান এবং খাবারের চরম অভাব দেখা দিয়েছে। সংকট সৃষ্টি হয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির।
গাইবান্ধার বোনারপাড়া রেলওয়ের ষ্টেশনমাস্টার খলিলুর রহমান জানান, রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সান্তাহার থেকে ছেড়ে আসা পদ্মরাগ লোকাল ট্রেনটি বাদিয়াখালি ষ্টেশনে আটকা পরে। বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় একাধিক ট্রেনের যাত্রা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ঢাকাগামী লালমনি এক্সপ্রেস ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি পার্বতীপুর হয়ে চলাচল করবে।
গাইবান্ধার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোছা. রোখছানা বেগম জানান, বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকার জন্য এ পর্যন্ত ৪০০ মে.টন চাল, নগদ ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ২ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে । এছাড়া নতুন করে আরও এক হাজার মে. টন চাল, ১০ লাখ টাকা এবং পাঁচ হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট বরাদ্ধ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বানভাসিদের জন্য ১২৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে।
এদিকে গাইবান্ধার ফুলছড়ি -সাঘাটায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ধসে যাওয়া অংশ ঘুরে দেখেছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও গাইবান্ধা-৫ আসনের এমপি অ্যাড. ফজলে রাব্বী মিয়া। এ সময় তিনি বন্যাদুর্গতদের সঙ্গে কথা বলে তাদের খোঁজ খবর নেন। নৌকায় করে তিনি ফুলছড়ি, কাতলামারী, কুঁকড়ার হাট, গজারিয়া, চিথুলিয়া, ফজলুপুর, হলদিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ৫ হাজার পারিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। এ সময় তিনি চাল, ডালসহ বিভিন্ন শুকনো খাবার বানভাসিদের হাতে তুলে দেন।
ডেপুটি স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক বন্যার্তদের খবর নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশে তিনি বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াতে এসেছেন। বন্যার্ত প্রতিটি মানুষকে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকার বন্যার্তদের পাশে আছে, সবসময় থাকবে।
জাহিদ খন্দকার/এমএমজেড/জেআইএম