প্রস্তুত সার্জেন্ট কিবরিয়ার শেষ ঠিকানা
সাধারণ মানুষকে নিরাপদে বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করতেন ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া মিকেল। সিগন্যালে একটু বেশি সময় নিলে যাত্রীরা গালি দিতো, আর সেই গালি শুনে সার্জেন্ট সাহেব মুচকি হাসতেন। সেই সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া মিকেল আজ অতীত।
সোমবার সকাল থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের কর্নকাঠি জিরো পয়েন্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যান চাপায় গুরুতর আহত হওয়ায় প্রথমে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় বিকেলে সেখান থেকে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে রাজধানীতে এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার সকালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। আজ (১৭ জুলাই) সুবিদখালী সরদার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাদা-দাদির কবরের পাশে দাফন করা হবে তার মরদেহ।
এজন্য বুধবার সকাল থেকে শ্রমিকরা কবর প্রস্তুতের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। বেলা ১১টায় সুবিদখালী সরকারি রয় পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে তৃতীয় ও শেষ নামাজে জানাজা শেষে এখানে চির নিদ্রায় শায়িত হবেন সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া।
খনন কাজে নিয়োজিত মো. নেছার সিকদার জানান, এলাকাবাসী নিজেরাই এ কাজ করেন। সকাল থেকে কবর খননের কাজ শুরু হয়, ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে ২০১৫ সালে পুলিশে যোগ দেন। ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগে যোগ দেন।
সুবিদখালীতে শোকের ছায়া
যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যান চাপায় নিহত ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া মিকেলের মৃত্যুতে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের সুবিদখালীতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কালো ব্যানারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা।
পটুয়াখালী সরকারি কলেজেও টাঙনো হয়েছে কালো শোক ব্যানার। শোকে কাতর বন্ধু সহকর্মীরা। ব্যানার টাঙিয়েছে মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বরিশাল, পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ব্যবস্থাপনা বিভাগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।
সুবিদখালীর বাসিন্দা সজিব দেবনাথ বলেন, কিবরিয়া ভাই খুব ভালো ছিলেন। তার কাছে ধর্ম প্রধান বিষয় ছিল না। আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বী, তারপরও ভাইয়া আমাদের স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তামিম হাসান ইমন নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে জিরো পয়েন্টের নাম 'শহিদ সার্জেন্ট কিবরিয়া স্কয়ার' করার দাবি জানাই।
নিহতের সহকর্মী সার্জেন্ট হাসান আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়াও করিতে পারিনি চিৎকার, বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার। এমন একটা দেশে বসবাস করি যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চলে যায়। জীবন নামের প্রদীপটা নিভিয়ে দেয়। আজ আর রাস্তায় কোনো মিছিল নেই, নেই কোনো প্রকারে ভাঙচুর। এটাও কিন্তু অ্যাক্সিডেন্ট, কই কাউকে তো আজ দেখলাম না রাস্তায় দাঁড়িয়ে পথ আগলে বলতে ১২ ঘণ্টার ভেতরে ঘাতক ট্রাকসহ ড্রাইভার চাই, বিচার চাই, করতে হবে। সবার কাছে প্রশ্ন কিবরিয়ার তো বাবা আছে, বাবার কাধে ছেলের লাশ কতটা কষ্টের পৃথিবীর সবচাইতে ভারী বোঝা। কিবরিয়ার তো মা আছে, মায়ের নাড়ি ছেড়া ধন তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে কী যে কষ্টের তোমার মাকে প্রশ্ন করো। একবার চিন্তা করে দেখো সংসারের একমাত্র অবলম্বন হয়ে থাকলে আজও এই সংসারটার কী হবে। আরে ভাই কয় টাকা বেতনে চাকরি করতো? কী পেয়েছিল? কেন জীবন দিয়েছিল? কাদের জন্য? একবার নিজের ভাই হারানোর কথাটা চিন্তা করো তাহলেই বুঝবে একজন পুলিশ সদস্য মারা গেলে আরেকটা সদস্যের কী কষ্ট হয়, কই মানবাধিকার সংস্থা কোথায়? ইলিয়াস কাঞ্চন কোথায়? বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন কোথায়? ও আজ তো আর মানুষ মরেনি, মরেছে পুলিশ। এই মনোভাব শেষ হবে কবে? তাহলে পুলিশ বলে বিচার কি পাবে না? আর কত কিবরিয়াকে মরতে হবে দেশে...?
মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এমএমজেড/জেআইএম