গাইবান্ধায় মহাসড়কে ফাটল, হুমকিতে ওয়াপদা বাঁধ
গাইবান্ধার ভরতখালী ইউনিয়নের ভাঙ্গা মোড় ও দক্ষিণ উল্যা এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ওয়াপদা বাঁধ সংলগ্ন আঞ্চলিক মহাসড়কে ফাটল ধরেছে। মহাসড়ক ও বাঁধের ওপর দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি যাচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ৫ উপজেলার ১৬৫টি গ্রামের প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এলাকাবাসী ও পউবো বস্তা ফেলে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছেন। পুরাতন বাদিয়াখালি থেকে ভরতখালি বাজার পর্যন্ত কয়েক স্থান দেবে যাওয়ায় বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোনো সময় বাঁধের কয়েক স্থান ভেঙে শতাধিক গ্রাম তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধা-সাঘাটা আঞ্চলিক মহাসড়কের ভরতখালী ইউনিয়নের ভাঙ্গা মোড় এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ ওয়াপদা বাঁধ সংলগ্ন অংশে ফাটল ধরেছে। এটি ভেঙে গেলে মুহূর্তেই শতাধিক গ্রাম তলে যাবে। বাঁধের পাশেই গটিয়া গ্রামে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার বাড়ি। বাঁধটি ভেঙে গেলে গটিয়াসহ শতাধিক গ্রাম তলিয়ে যাবে।
ভরতখালি ইউনিয়নের ভাঙ্গামোড় এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মজিদ জানান, সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যায় এই ওয়াপদা বাঁধ সংলগ্ন চিথুলিয়া সাব-বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় পানির প্রবল চাপ পড়েছে। তাই যে কোনো সময় মূল বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বিগত ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় ভাঙ্গামোড় এলাকার এই স্থানেই বাঁধের কিছু অংশ দেবে যায়। পরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বাঁধটি রক্ষা করা হয়েছিল। এ বছর যাদি বাঁধটি রক্ষায় এখনই ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে ভেঙে শতাধিক গ্রাম মুহূর্তেই তলিয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জ্বল কুমার ঘোষ জানান, গাইবান্ধা-সাঘাটা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে পাউবোকে জানানো হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১২৮ সেন্টিমিটার এবং শহরের ঘাঘট নদীর পানি ৭৮ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টা চলছে।’
গত দু'দিনে বাঁধ ভাঙন আতঙ্কে আছেন গাইবান্ধার মানুষ। অতিরিক্ত পানির চাপে সোমবার (১৫ জুলাই ) সকালে গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের ফকিরপাড়া এলাকায় ঘাঘট রক্ষা বাঁধের প্রায় দেড়শ ফুট ও গোদারহাট এলাকায় সোনাইল বাঁধের প্রায় ২০০ ফুট ধসে যায়। ফলে ওই দুই এলাকার অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
এছাড়া সোমবার ভোরের দিকে ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারি গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ওয়াপদা বাঁধ ধসে অন্তত ১০টি বাড়ি-ঘর পানিতে ভেসে গেছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আরও ১৫টি গ্রাম।
ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সোমবার দুপুরে সাদুল্লাপুরের কামারপাড়া ইউনিয়নের পুরাণলক্ষ্মীপুর (দ্বীপ) এলাকার বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় যমুনা নদী বেষ্টিত চিথুলিয়া বাঁধ ভেঙে আরও কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে জেরা সিভিল সার্জন এবিএম আবু হানিফ তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বন্যাদুর্গত এলাকায় জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ১০৯টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। প্রত্যেক টিমে তিন থেকে পাঁচজন রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, স্যালাইনসহ অন্যান্য ওষুধপত্র পর্যাপ্ত রয়েছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের গাইবান্ধার উপ-পরিচালক এসএম ফেরদৌস বলেন, গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এই চার উপজেলায় ৪৭৪ হেক্টর জমির রোপা আমন, ৯৮৫ হেক্টরের পাট, ২৬৯ হেক্টরের রোপা আমন বীজতলা, ৮৫২ হেক্টরের বিভিন্ন ধরনের সবজি, ৩ হেক্টরের পান এবং ২৫ হেক্টরের তিল পানিতে তলিয়ে গেছে।’
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোছা. রোখছানা বেগম জানান, ‘শনিবার থেকে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোত ত্রাণ সহায়তা দেয়া শুরু হয়েছে। বানভাসি মানুষদের জন্য এ পর্যন্ত ৪০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও দুই হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়া নতুন করে আরও একহাজার মেট্রিক টন চাল, দশ লাখ টাকা এবং পাঁচ হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট বরাদ্ধ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেয়া হয়েছে।
জাহিদ খন্দকার/এমএমজেড/জেআইএম