গাইবান্ধায় আরও ১৫ গ্রাম প্লাবিত
গাইবান্ধায় টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নামছে পাহাড়ি ঢলে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ২টি বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নতুন করে আরও ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সোমবার দুপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে ১০৯ সে. মি., সুন্দরগঞ্জের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৬ সে. মি. এবং ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে ৬৬ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গাইবান্ধায় এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পাউবোর অবহেলায় একের পর এক বাঁধ ভাঙছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সোমবার ভোরে কাতলামারী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২০০ ফুট ধসে যাওয়ায় নতুন করে গজারিয়া, উদাখালি, উরিয়া, কাতলামারী, মুন্সিপাড়াসহ প্রায় ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে । কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই সদর উপজেলার খোলাহাটী ফকিরের পাড়ায় ঘাঘট নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫০ ফুট অংশ ভেঙে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে
এ বিষয়ে ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রহিম জাগো জানান, বিভিন্ন সময় পাউবোকে তলব করেও বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়নি। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না।
কাতলামারী গ্রামের বাসিন্দা সাহাদুল ইসলাম ও আজিজুর রহমান জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় তারা বাড়ি-ঘর থেকে সবকিছু নিয়ে বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে সেখানও নিরাপদ নয়।
সদর উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের কলেজছাত্র ফয়সাল মিয়া জানান, হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ঘর-বাড়ি হারিয়ে ৫ গ্রামের শতাধিক পরিবার মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। নৌকায় করে এসব বসতবাড়ির আসবাবপত্র উঁচু স্থানে নেয়া হয়েছে। এখন ভরসা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীবেষ্টিত ফুলছড়ির উপজেলার উড়িয়া, উদাখালী, এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর, গজারিয়া, ফুলছড়ি ইউনিয়ন ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার মোল্লারচর, কামারজানী এবং সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী, সাঘাটা, হলদিয়া, জুমারবাড়ি ইউনিয়নের অন্তত ৫০ গ্রামের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে কাঁচা-পাকা রাস্তা, পাট ক্ষেত, ধানের বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসলি জমি। ফলে এসব এলাকার মানুষ, গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে। এতে অন্তত লক্ষাধিক মানুষের বসতভিটায় পানি ঢুকে পড়েছে। বিভিন্ন বাঁধ ভেঙে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের সর্বশেষ তথ্য অনুয়ায়ী গাইবান্ধার ৪ উপজেলার সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তাদের জন্য ৬৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় বন্যা কবলিত ৪ উপজেলায় ২৪০ মে. টন চাল, নগদ ২ লাখ টাকা, ২ হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, রোববার (১৪ জুলাই) দুপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যাবধানে সোমবার প্রায় দিগুণ বেড়ে ১০৯ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।। ঘাঘট নদী গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জের কাউনিয়া পয়েন্টে ৬ সে.মি কমে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। করতোয়া ও যমুনা নদীর পানি যে কোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
জাহিদ খন্দকার/এমএমজেড/এমএস