ব্রহ্মপুত্রের পানিও বিপৎসীমা ছাড়াল
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৫:১৯ এএম, ১৩ জুলাই ২০১৯
কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার বিভিন্ন নদ-নদীতে হু হু করে বাড়ছে পানি। শুক্রবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার চার সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা, ঘাঘট, কাটাখালী ও যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। নদী ভাঙনও থামেনি। যেকোনো সময় এ সব নদীর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীবেষ্টিত সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, পালপাড়া, চিনিরপটল, চকপাড়া, পবনতাইড়, থৈকরপাড়া, বাশহাটা, মুন্সিরহাট, গোবিন্দি, নলছিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তিস্তা, ঘাঘট নদীবেষ্টিত সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানির স্রোতে বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাই এলাকার লোকজনের মাঝে বন্যা ও ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে। বসতবাড়িতে বন্যার পানি ওঠায় গবাদি পশু নিয়ে অনেকে পড়েছেন বিপাকে। তবে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা বা তথ্য এখনও জেলা-উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
নদ নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে স্রোতের তীব্রতাও। এতে ব্যাপক রূপ ধারণ করেছে নদী ভাঙন। ফলে গত দু’সপ্তাহে নদী ভাঙনে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিপুর, কাপাসিয়া, তারাপুর, বেলকা, হরিপুর ও শ্রীপুর ইউনিয়নের আবাদি জমি, রাস্তাসহ শতাধিক বাড়িঘর এবং শতাধিক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদী ভাঙনের সংবাদ জাগো নিউজে প্রকাশের পর শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেলে এ উপজেলার ভাঙন ও বন্যা কবলিত এলাকা হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের তিস্তা নদীর ভাঙন ও বন্যা কবলিত ভাটা কাপাসিয়া, লালচামার, লালচামার গুচ্ছ গ্রাম, আশ্রয়ন কেন্দ্র-২, পাগলার চর, কাজিয়ার চর, কালাইসোতার চর, শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর (পুটিমারী), পোড়ার চর ও হরিপুর ইউনিয়নের লখিয়ার পাড়া, চরচরিতা বাড়ি, কানিচরিতাবাড়ি, চর মাদারীপাড়া, রাঘব, পাড়া সাদুয়াসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোলেমান আলী। এ সময় তিনি নদী ভাঙন প্রতিরোধে সব ব্যবস্থা গ্রহণসহ বন্যায় সরকারি ত্রাণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী জাগো নিউজকে জানান, হলদিয়া ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। সময় মতো তাদের জন্য সরকারি ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যাপারে উপজেলা প্রশসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম জাকির বলেন, ‘দুই বছরে এ ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, গোঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার বসতভিটে, আবাদি জমি, হারিয়েছে। এ ছাড়াও মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বিলিন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। কোনো প্রতিকার মিলছে না।
ফুলছড়ি উপজেলার বাজে ফুলছড়ি গ্রামের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, যেভাবে বন্যার পানি বাড়তে শুরু করেছে তাতে এ গ্রামের মানুষ বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে পড়বে।
সাঘাটা উপজেলার ভরতখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিম আক্তার জানায়, এভাবে পানি বাড়তে থাকলে আগামী সপ্তাহে স্কুল মাঠে পানি উঠবে। ফলে পাঠদানও ব্যাহত হতে পারে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদে ৪৪ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীতে ৫৯ সেন্টিমিটার ও তিস্তা নদীতে ১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার চার সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা, ঘাঘট, কাটাখালী ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। তবে এখনও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীবেষ্টিত গাইবান্ধাবাসীর আতঙ্কিত হওয়া কিছু নেই।
জাহিদ খন্দকার/এনডিএস/