ডুবে গেছে তাহিরপুর উপজেলার রাস্তাঘাট

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৬:২৫ পিএম, ১০ জুলাই ২০১৯

টানা তিনদিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত এ তথ্য নিশ্চিত করেছে পানি উন্নয়নবোর্ড।

এদিকে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলসহ পৌর শহরের বিভিন্ন জায়গা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও সদর উপজেলার লালপুর, রাধানগর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সুনামগঞ্জ শহরের পৌর এলাকা ও বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি হয়ে বিভিন্ন বাড়িতে পানি ঢুকেছে। এতে করে ডুবে গেছে এলাকার রাস্তাঘাট। এছাড়া নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এদিকে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন হাওরের মানুষ। বন্ধ রয়েছে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ডুবে গেছে তাহিরপুর উপজেলার রাস্তাঘাট

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর এলাকার বাসিন্দা রফি মিয়া বলেন, টানা বৃষ্টিতে আমার ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। পানি বৃদ্ধি হওয়ায় রাস্তায় এখন হাঁটু পানি। খাবারের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছি। একবেলা খেলে দুইবেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা আসেনি।

রাধানগর এলাকার বাসিন্দা মনির মিয়া বলেন, রাত থেকে বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় আমাদের ঘরে পানি বেড়েছে। খাবার জন্য আমরা বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছি না। রান্না ঘরও ডুবে যাওয়ায় সকালের খাবারই খেতে পারিনি।

তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের বাসিন্দা নন্দর দাশ বলেন, সুনাগঞ্জের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তাছাড়া আমাদের গ্রামে এখন কোমর পানি। এরকম পানি বৃদ্ধি হতে থাকলে আমরা কোথায় যাব ঠিক নেই।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সালুকাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা আঙ্গুরি বেগম বলেন, রান্না করতে পারিনি। চুলা ক্যামনে জ্বালাইমু ঘরের ভিতর পানি। ছেলে-মেয়েরে স্কুলে পাঠাইতে পারছি না। আমরা পানিবন্দি হয়ে রইছি। এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা আসেনি।

ডুবে গেছে তাহিরপুর উপজেলার রাস্তাঘাট

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, বৃষ্টির কারণে পানি বাড়ছে নদী ও হাওরগুলোতে। আমার উপজেলার অনেক এলাকা ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। তবে বন্যা মোকাবেলায় উপজেলা পরিষদের প্রস্তুতি রয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পানি বৃদ্ধি হওয়ায় আমরা কোনো বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রাখিনি। কিন্তু জেলার ধর্মপাশা ও বিশ্বম্ভরপু উপজেলার তিনটি বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় আমরা অন্য একটি জায়গায় পাঠদানের ব্যবস্থা করেছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক ভুঁইয়া বলেন, টানা বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৫১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৪১ মিলিমিটার। এভাবে পানি বৃদ্ধিকে বন্যা বলা যায়।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জাগো নিউজকে বলেন, সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় আমরা জরুরি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে টিম প্রস্তুত রয়েছে। সকল সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্লাবিত এলাকায় সহায়তার জন্য ৩৭৩৫ প্যাকেট শুকনা খাবার মজুদ রাখা হয়েছে।

মোসাইদ রাহাত/এমএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।